২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ১০ অক্টোবর
2018.09.18
ঢাকা

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হতে যাচ্ছে আগামী ১০ অক্টোবর।
আলোচিত এই মামলায় আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ বিএনপির নেতা, সাবেক পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ৪৯ জন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাস-বিরোধী জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন কয়েক’শ মানুষ।
ওই ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
মঙ্গলবার মামলা দুটির যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার বকশি বাজারে স্থাপিত এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় ৫২ জন আসামি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি হয়েছে।
তিনি জানান, আদালত মোট ৪৯ জন জীবিত আসামির মধ্যে জামিনে থাকা আটজনের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। রায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে থাকতে হবে।
২১ আগস্ট হামলা
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দিনদুপুরে জনাকীর্ণ জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা।
ঘটনার পর পুলিশ জজ মিয়া নামে গুলিস্তানের এক হকারকে এই হামলার দায়ে গ্রেপ্তার করে। তাকে রিমান্ডে নিলে জজ মিয়া শেখ হাসিনাকে আক্রমণের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যা পরে সাজানো বলে প্রমাণ হয়।
এর প্রতিদান হিসাবে তাঁর পরিবারকে সরকার মাসোহারা দিত বলে জানান জজ মিয়া।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় তদন্ত শুরু হয়। ওই তদন্তের পর পুলিশ তারেক রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান, এনএস আইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজাকুল হায়দারসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি সরকারের প্রশাসনিক সহায়তায় ওই হামলা চালানো হয়।
রেজাউর রহমান বেনারকে বলেন, ২১ আগস্ট হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। পরিকল্পনা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করার চেষ্টা। তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ হাওয়া ভবন ছিল এই হামলার কেন্দ্রবিন্দু।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট হামলা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়ার নাটক করা হয়।
রেজাউর রহমান বলেন, “বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মদদে ২১ আগস্ট হামলা চালানো হয়। প্রশাসনিক সহায়তার কারণে যারা অপরাধ করেছে তাঁরা নিরাপদে পালিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই আমরা চাই তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।”
অবশ্য আসামি পক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বেনারকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অন্যায়ভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়াই তারেক রহমানকে এই মামলায় জড়িয়েছে।
তিনি বলেন, “কোনো পরিকল্পনাকারী কি সাক্ষ্য দিয়ে বলেছে যে তারেক রহমান তাদের হামলা চালাতে বলেছেন? কেউ বলেননি। সুতরাং তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।”
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস করতেই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “রায় কি হবে সেটা আদালতই বলতে পারবে। তবে যেহেতু এই মামলার আসামিরা বিএনপি নেতৃবৃন্দ সেহেতু তাঁদের সাজা হলে দল পুনরায় সংকটে পরবে বলা যায়।”
ড. নিজাম বলেন, বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যা করার ঘটনার তদন্ত না করে বিএনপি সরকার অন্যায় করেছে। তারা যদি বিচার করত তাহলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বেঁচে যেত।
তিনি বলেন, বিচার না করে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে মামলাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। তাই এই হামলার সাথে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ উঠেছে তা ভুল বলা যাবে না। এই হামলার দায়দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, একটি দেশের বিরোধীদলীয় নেতার ওপর গ্রেনেড হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
‘রাজনৈতিক হামলা’
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে “একটি রাজনৈতিক হামলা,” বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার শাহেদুল আনাম খান।
তিনি বেনারকে বলেন, ২১ আগস্ট হামলা ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা।
“আমরা আশা করি ২১ আগস্ট হামলা মামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে,” যোগ করেন ব্রিগেডিয়ার আনাম।