নয় বছর আগের একটি মামলায় এক ডজন মৃত্যুদণ্ড
2016.03.23

নয় বছর আগে হওয়া এক জোড়া খুনের ঘটনায় ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের একটি আদালত। পাশাপাশি ১০ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার এ আদেশ দেন নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ এ এন এম মোরশেদ খান। বিচারের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
দণ্ডিত হলেন যাঁরা
নয় বছর আগে নোয়াখালী শহরে একজন মোবাইল ব্যবসায়ী ও তার কর্মচারীকে হত্যার দায়ে দণ্ডিতরা হলেন মোফাজ্জল হোসেন জাবেদ, এলজি কামাল, কামরুল হাসান সোহাগ, রাশেদ ড্রাইভার, আবদুস সবুর, জাফর হোসেন মনু, আলি আকবর সুজন, শামছুদ্দিন ভুট্টু, সাহাব উদ্দিন, নাছির উদ্দিন মঞ্জু, আবু ইউসুফ সুমন ও তোফাজ্জল হোসেন জুয়েল। এদের মধ্যে আবু ইউসুফ সুমন ও তোফাজ্জল হোসেন জুয়েল ছাড়া বাকি সব আসামি পলাতক রয়েছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার মাইজদী শহরের ‘মোবাইল ফেয়ার’ দোকানের মালিক আবু বকর ছিদ্দিকের ছেলে ফিরোজ কবির মিরণ ও সামছুল কবির রুবেল এবং কর্মচারী সুমন পাল তাদের দোকান বন্ধ করেন। তাঁরা বিভিন্ন দামের মোবাইল সেট, প্রি-পেইড কার্ড ও মোবাইল সেট বিক্রির নগদ টাকা নিয়ে রিকশায় চড়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন।
পথে মাইজদী-চৌমুহনী প্রধান সড়কের সুধারাম থানার এক কি.মি. উত্তরে উডল্যান্ড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের সামনে পৌঁছালে তাদের রিকশার গতিরোধ করে আসামিরা। এরপর জোর করে তাঁদের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
এ সময় অপহৃতরা ডাকাতদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। একপর্যায়ে আসামিরা ছুরি মেরে সুমন পাল, ফিরোজ করিব মিরণ এবং সামছুল কবির রুবেলকে রাস্তায় ফেলে দেয়। তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল সেট ও প্রি-পেইড কার্ড সহ প্রায় ১০ লাখ টাকা লুট করে।
স্থানীয় লোকজন আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার সুমন পালকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ফিরোজ কবির মিরণ ও সামছুল কবির রুবেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফিরোজ কবিরও মারা যান।
আহত সামছুল কবির রুবেল উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরে বেঁচে থাকলেও তার মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং চিরতরে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে।
জজ আদালতের পিপি এ টি এম মহিব উল্লাহ বলেন, “২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সামছুল করিব রুবেলের বাবা আবু বক্কর ছিদ্দিক সুধারাম থানায় ২৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে ১০ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন আগে সোলাইমান জিসান নামে এক আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
২০০৮ সালের ২৩ জুলাই তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক এএসএম নুরুল আলম তালুকদার ।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৩৭ জন ও আসামিপক্ষের একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
‘সাক্ষী সুরক্ষা না থাকাই দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ’
দীর্ঘদিন পরে হলেও এ জোড়া খুনের বিচার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় বলে অভিযোগ এনেছেন তারা। সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে না পারাই মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণ বলে মনে করেন তারা।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত ডা. মিলনের বিচারের উদাহরণ টেনে এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী জেড আই খান পান্না বেনারকে বলেন, “ডা. মিলনকে হত্যা করা হয় শত শত লোকের সামনে। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে কেউ আদালতে সাক্ষী দেননি। এভাবে সাক্ষী না থাকার কারণে দেশের হাজার হাজার মামলা দীর্ঘসূত্রতায় পড়ছে।”