নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের দাবি

কামরান রেজা চৌধুরী ও পরিতোষ পাল
2020.02.28
ঢাকা ও কলকাতা
200228_-Protest_Delhi_Attack_1000.jpg দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর হামলা ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে জুম্মার নামাজ শেষে ঢাকায় বিক্ষোভ করে কয়েকটি ইসলামি দল। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর আক্রমণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে তাঁকে বাংলাদেশ সফরের জন্য দেয়া আমন্ত্রণ বাতিলের দাবি জানিয়েছে দেশের ছয়টি ইসলামী দল। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়।

আমন্ত্রণ বাতিল না করলে, মোদির বাংলাদেশ সফর ঠেকাতে ঢাকার বিমানবন্দর ঘেরাও করা হবে বলে বেনারকে জানান দলগুলোর নেতারা।

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকিীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে ১৬ মার্চ ঢাকা আসার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির।

শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে কয়েক হাজার মুসল্লি বায়তুল মোকাররমের উত্তরগেটে অবস্থান নেন। পরে আশেপাশের রাস্তা প্রদক্ষিণ করেন তাঁরা।

বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনকারী দলগুলো হলো খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলন।

খেলাফত আন্দোলনের ভাইস প্রেডিডেন্ট মুজিবুর রহমান হামিদি বেনারকে বলেন, “দিল্লিতে নিরপরাধ মুসলমানদের ওপর আক্রমণের সাথে মোদি সরকারের হাত রয়েছে। এতগুলো নিরপরাধ মুসলমান হত্যার দায়দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে।”

“আমরা সকল ধর্মের মানুষের সাথে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছি,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উনি আসলে আমাদের ভয়, আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবে। সুতরাং, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমাদের দাবি নরেন্দ্র মোদিকে দেয়া আমন্ত্রণ বাতিল করুক সরকার।”

তিনি বলেন, “যদি সরকার বাতিল না করে তাহলে আমাদের ভাইয়েরা বিমানবন্দর ঘেরাও করবে। কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।”

এদিকে “আমরা ইসলামী দলগুলোর দাবি সম্পর্কে জেনেছি,” মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “সরকারের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। ভারতের সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।”

তিনি বলেন, “দিল্লিতে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছে ইসলামী দলগুলো। আমি তাতে কোনো সমস্যা দেখি না। কিন্তু কেউ যদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় তাহলে আমরা কঠোরভাবে দমন করব।”

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী বেনারকে বলেন, “দিল্লিতে মুসলমানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। আগুন দিয়ে মসজিদ পোড়ানো হচ্ছে। মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে। এখনই এই নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হোক।”

ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি দিল্লির সহিংস ঘটনার প্রতিবাদ করেছে গণসংহতি আন্দোলনও।

শুক্রবার ঢাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের এখন কর্তব্য হচ্ছে ভারত সরকারের এই সাম্প্রদায়িক নীতির এবং হামলা-হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানানো, তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ঘোষণা নিয়ে দাঁড়ানো।”

“বাংলাদেশে মুজিববর্ষ পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে, রাষ্ট্রীয়ভাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই অনুষ্ঠানে তাঁকে (মোদিকে) আমন্ত্রণ জানানো বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে না,” বলেন সাকি।

দিল্লির পরিস্থিতি

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংগঠিত সহিংসতার পর মৌজপুর, বাবরপুর, জাফরাবাদের মতো বেশ কয়েকটি এলাকা এখনও থমথমে। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজল শুক্রবার উত্তরপূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন মসজিদের পক্ষ থেকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়। কোনো রকম গুজবে কান না দিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আবেদনও জানানো হয়। সেইসঙ্গে এলাকায় সন্দেহজনক কাউকে দেখলে প্রশাসনকে খবর দিতে এবং পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার আবেদনও জানানো হয়।

শুক্রবার ষষ্ঠ দিনে আরও চার জনের মৃত্যু হাসপাতালে নথিভুক্ত হয়েছে। ফলে দাঙ্গায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪২-এ দাঁড়িয়েছে। বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত দিল্লির তিনটি হাসপাতালে ৩৮ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত হয় বলে হাসপাতালগুলোর বিবৃতিতে জানানো হয়।

দিল্লির সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৬৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রণদীপ সিং রনধাওয়া।

এছাড়া দিল্লির সহিংস ঘটনা তদন্তে দুটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে বলে জানান দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার (আইন-শৃঙ্খলা) এস এন শ্রীবাস্তব।

গত রবিবার রাত থেকে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছিল তাদের অবরোধের বিরুদ্ধে এক কিলোমিটার দূরে পাল্টা বিক্ষোভ করে এই আইনের সমর্থকরা। পরে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

গত ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর সংসদে পাশ হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলটি আইনে পরিণত হয়।

এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিক হওয়ার অনুমতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

হিন্দুবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির মতে, এর ফলে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে যারা এসেছেন তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন। তবে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মুসলিমদের কোনঠাসা করার লক্ষ্যে এই আইন করা হয়েছে। এরপর থেকে ভারতব্যাপী শুরু হয় বিক্ষোভ-সমাবেশ।

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “দিল্লিতে যা ঘটেছে তা খুবই আপসেটিং। এটা হওয়া উচিত ছিল না। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি একজন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সাহায্য করা দরকার। এবং শান্তি ফিরিয়ে আনা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে সমস্যার সমাধান জরুরি। রাজনৈতিক আলোচনা পরে হতে পারবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।