যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতার ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বেনার ডেস্ক
2017.06.13
ওয়াশিংটন ডিসি
প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফর উপলক্ষে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফর উপলক্ষে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। জুন ১২, ২০১৭।
সৌজন্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এক বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ এক গৃহকর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কূটনীতিককে গ্রেফতারের ঘটনাকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সুস্পষ্টভাবে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এই গ্রেফতার ভিয়েনা কনভেনশনের কনসুলার রিলেশন ১৯৬৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,” বিবৃতিতে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে মঙ্গলবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রেফতার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ।

সোমবার নিউ ইয়র্কে বালাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টির সুপ্রিম কোর্ট এর বিচারপতি ড্যানিয়েল লুইসের আদালতে তাঁকে হাজির করা হলে তিনি শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান।

নিউ ইয়র্কের কুইন্স কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিন বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর গৃহকর্মীকে বন্দী রেখে নির্যাতন, বেতন না দেওয়া, দৈনিক আঠারো ঘণ্টা কাজ করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে শাহেদুল ইসলামের ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের শেষ দিকে শাহেদুল ইসলাম মোহাম্মদ আমিনকে গৃহকর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসেন।

শাহেদুল ইসলামের বাসা থেকে ২০১৬ সালের মে মাসে আমিন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান।

“এই গৃহকর্মী তেরো মাস আগে (১৭ মে ২০১৬) মি. ইসলামের বাসা থেকে নিখোঁজ হন। ঘটনাটি সাথে সাথেই ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এর কাছে নিউ ইয়র্কের কনসাল জেনারেল ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে যথাক্রমে ২০১৬ সালের মে মাসের ১৮ ও ১৯ তারিখ জানানো হয়,” বিবৃতিতে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“কিন্তু মি. ইসলামের গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত ওই বিষয়ে কোনো অগ্রগতিই আমরা জানতে পারিনি” বলা হয় বিবৃতিতে।

এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার প্রেস, শামিম আহমেদ বেনারকে বলেন, “একজন কূটনীতিককে গ্রেফতার করার কিছু নিয়মনীতি আছে। এক্ষেত্রে সেগুলো মানা হয়নি।”

তিনি বলেন, “তেরো মাস আগে জানানো হলেও তারা আমিনকে খুঁজে দেবার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো আমিনের অভিযোগেই হঠাৎ করে শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করল। বিষয়টা বিস্ময়কর।”

দূতাবাস সূত্র থেকে জানা যায়, কূটনীতিকরা সাধারণত বিদেশি মিশনগুলোতে বদলি হলে পুরোনো বিশ্বস্ত গৃহকর্মীদেরকেই নিয়ে আসেন। গৃহকর্মীদের চুক্তিমতো বেতন থেকে থাকা খাওয়া ও অন্যান্য খরচ কেটে রেখে বাকিটা বেতন হিসেবে দেওয়া হয়।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই গৃহকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য অভিবাসন সুবিধা নেবার উদ্দেশ্যে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক শ্রম, বেতনভাতা না দেওয়াসহ অন্যান্য নির্যাতনের অভিযোগ করে থাকেন বলে কূটনীতিক সূত্র জানায়।

“মূলত যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ব্যবস্থা করার জন্যই এটা একটা দুরভিসন্ধিমূলক মামলা। কেউ হয়ত তাকে (আমিনকে) বুঝিয়েছে যে এই মামলা করলে সে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যেতে পারবে,” বেনারকে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।

“তাকে (আমিনকে) হয়ত কেউ পরামর্শ দিয়েছে যে এই রকম মামলা করলে এই দেশে থেকে যাবার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে,” বেনারকে বলেন শামিম আহমেদ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরও বাংলাদেশি সাবেক এক কনসাল জেনারেল ও তার স্ত্রীকে গৃহকর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গৃহকর্মীর প্রতি ‘ক্রীতদাসের মতো’ আচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করে নিউ ইয়র্কের মেনহাটন আদালত।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।