পালিত হচ্ছে দুর্গা পূজা
2018.10.16
কলকাতা ও ঢাকা

মহা সমারোহে চলছে হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার বন্দনার মধ্য দিয়ে আজ শেষ হলো সপ্তমী তিথি। এরপর অষ্টমী, নবমীর পরে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীর বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এ মহোৎসব।
“ধর্মীয় অনুষঙ্গকে ছাড়িয়ে দুর্গোৎসব অনেক দিনই সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবের রূপ নিয়েছে। আর তাই সব ধর্মের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ এই উৎসবে অনিবার্য হয়ে উঠেছে”, বেনারকে বলেন পশ্চিমবঙ্গের সমাজকর্মী অধ্যাপিকা সৈয়দ তনভির নাসরিন।
তিনি বলেন, “দুর্গা পূজার মাধ্যমে অশুভ শক্তির ওপরে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠার বার্তাই সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাই বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসব সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।”
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এ বছর প্রায় ৩০ হাজার সর্বজনীন পূজার আয়োজন হয়েছে বলে জানান পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক কর্তা। তিনি বেনারকে বলেন, “কলকাতাতেই আয়োজিত হয়েছে ৩ হাজারের বেশি। এ ছাড়া হাজারেরও বেশি বনেদি বাড়িতে হচ্ছে পারিবারিক দেবী বন্দনা।”
এবার বাংলাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে সর্বজনীন দুর্গা পূজা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১১৯৫টি পূজামণ্ডপ বেড়েছে।
“সারা দেশে এবার পূজা মণ্ডপ বেশি। আশা করছি এবারের পূজা খুব ভালো হবে,” বেনারকে বলেন স্বামীবাগ পূজা মণ্ডপের তত্ত্বাবধায়ক সত্যেন কুমার।
এদিকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও হচ্ছে পূজা উদযাপন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারিভাবে এই দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে নতুন বস্ত্র বিতরণও করেছে পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
বাঙালি হিন্দুদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দুর্গোৎসবের। অবশ্য এর ঠিক পাঁচ দিন আগে মহালয়ার মাধ্যমে দেবীর আগমন বার্তা জানান দেওয়া হয়।
দেবী দুর্গাকে মনে করা হয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক। গত সোমবার ষষ্ঠীতে শুরু হয়ে এই উৎসব চলবে শুক্রবার দশমী পর্যন্ত। দশমীতে সিঁদুর খেলার পর বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তি এই উৎসবের।
কড়া নিরাপত্তা
দুর্গা পূজা উপলক্ষে কলকাতা ও ঢাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে দু’দেশের পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “পূজার দিনগুলিতে আমরা অতিরিক্ত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছি। প্রতিমা বিসর্জনের দিন পর্যন্ত এই নজরদারি চলবে।”
“শুধুমাত্র দর্শনার্থীদের চলাফেরার ওপরই নয়, পুলিশ সতর্ক থাকবে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা তৈরির চেষ্টার বিরুদ্ধেও”, বলেন এক পুলিশ কর্তা।
এদিকে শারদীয় দুর্গা পূজাকে ঘিরে নাশকতার কোনো ধরনের হুমকি নেই বলে রোববার সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, “তারপরও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেকটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটর করার পাশাপাশি পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন।”
উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের হিন্দুরা
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও দুর্গা পূজার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারপরেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
“এটা নির্বাচনের বছর। অতীতেও জাতীয় নির্বাচনের বছরগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য স্বস্তির ছিল না। এ বছরও ইতিমধ্যে শেরপুর, বগুড়া, নীলফামারী, খুলনা, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, শরীয়তপুর, দিনাজপুর, রংপুর, গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি।
তবে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বেনারকে বলেন, “সরকার নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করলে পূজা ও ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ হবে না।”
তাঁর মতে, “নিরাপত্তা আসবে তখনই, যখন সমাজ ও রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করা সম্ভব হবে।”