‘উন্নয়নশীল দেশ’ এর প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের সাফল্য উদযাপন করল বাংলাদেশ
2018.03.22
ঢাকা

স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের সাফল্য খুব জোরেশোরে উদ্যাপন করছে বাংলাদেশ সরকার।
উদ্যাপনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বলেছেন, “বাঙালি যে পারে এটাই তার প্রমাণ। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা যেন থেমে না যায়।”
দেশব্যাপী ব্যাপক উদ্যাপনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অ্যাডহক ভিত্তিতে পরিকল্পনা না নিয়ে ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগের কারণেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে।”
এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ সমৃদ্ধ দেশ হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা আর পরমুখাপেক্ষী নেই। শতকরা ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে আমরা বাজেট করতে পারি। যে বাজেট অতীতের থেকে চারগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
তিনটি শর্ত পূরণ
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবার জন্য তিনটি শর্তের সব কটি পূরণ করায় চলতি মার্চ মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করে।
মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচক বিবেচনায় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এই ঘোষণা দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিডিপি’র স্বীকৃতিপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি উন্নয়নশীল দেশের কমপক্ষে মাথাপিছু আয় হবে ১,২৩০ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় দাঁড়িয়েছে ১,৬১০ ডলার।
এ ছাড়া মানব সম্পদ সূচকে স্কোর থাকতে হবে ৬৬ বা তার বেশি। বাংলাদেশের স্কোর এখন ৭২ দশমিক ৮। আর অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের স্কোর হতে হবে ২৫ বা তার কম। বাংলাদেশের স্কোর এখন ২৫।
স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের চূড়ান্তভাবে উত্তরণের জন্য ২০২৪ সালে জাতিসংঘের ঘোষণা পর্যন্ত তিনটি সূচকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
সিডিপি তিন বছর পর ২০২১ সালে প্রয়োজনীয় তিনটি সূচক বাংলাদেশ ঠিকমতো অব্যাহত রাখতে পারছে কি না সে বিষয়ে পর্যালোচনা করবে। বাংলাদেশ সূচক বজায় রাখতে পারলে আবার তার তিন বছর পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হবে।
এ প্রসঙ্গে সিডিপির ১৫ মার্চের সভার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ, লাও পিপল’স ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক ও মিয়ানমার প্রথমবারের মতো উত্তরণের মান অর্জন করেছে, কিন্তু বিবেচনার জন্য তাদেরকে এই মান দ্বিতীয়বারের মতো দেখাতে হবে।”
জাতিসংঘের ইকনোমিক এন্ড সোশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের উন্নয়ন নীতিমালা ও বিশ্লেষণ বিভাগের এলডিসি বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল গে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে সত্যিকার সফলতার ঘটনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
“স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুমৃত্যু এবং জীবনমানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড়ো অর্জন রয়েছে,” ১৩ মার্চের ওই বিবৃতিতে বলেন ড্যানিয়েল গে।
তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলোই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভঙ্গুরতা কমানোর দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, সুতরাং এটি সত্যি একটি সফলতার ঘটনা।”
তবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব ছাড় পেত ভবিষ্যতে তা আর পাবে না বলে বেনারকে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষক ড. মুস্তাফিজুর রহমান।
“এ জন্য অনেক দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। তবে এই উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের ওপর বাইরের দেশগুলোর আস্থা বাড়বে। এতে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও বাড়বে,” তিনি বলেন।
সরকারের সফলতার উৎসব
বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির উদ্যাপন শুরু হয়েছে।
উদ্যাপনের প্রথম দিনে রাজধানীর ৯টি স্থান থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আতশবাজি এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরকারের ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রা করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সরকারের সফলতা তুলে ধরতে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন পালিত হয়।
একইভাবে দেশব্যাপী ২২ থেকে ২৮ মার্চ শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন ছবি প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলার আয়োজন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর ভিডিও প্রদর্শন করছে। উদ্যাপন আয়োজনের সামগ্রিক দেখভাল করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
উদ্যাপনের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম বেনারকে বলেছেন, “এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। উদ্যাপনের ফলে জাতির মনোবল আরও বাড়বে।”
“উন্নয়ন হইছে। আগের অবস্থা এখন আর নাই। কিন্তু আমাকে রিকশাই টানতে হয়,” বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে বেনারকে বলেন ঢাকার রিকশা চালক টুটুল মোল্লা।
তবে তাঁর প্রত্যাশা তাঁর ছেলে বড় হয়ে এই কাজ করবে না।