সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে না বুয়েট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পুলক ঘটক
2020.02.20
ঢাকা
200220_BUET_1000.JPG ঢাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী। ১১ অক্টোবর ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)।

বুধবার বুয়েট এবং বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এবার পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য সমন্বিত পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানায় চবি।

“উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়েছে। সভায় এ বছর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে,” বেনারকে বলেন চবি’র রেজিস্ট্রার কেএম নূর আহমদ।

বুয়েটের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা পরিষদের সদস্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় সেভাবেই পরীক্ষা নিয়ে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ভর্তি করা হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ছে।”

“বিগত ৪৮ বছর যাবত আমরা যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র ভর্তি করে আসছি, সেই পদ্ধতি পরিবর্তন করা যুক্তিসঙ্গত হবে না বলে কাউন্সিলের সদস্যরা মতামত দিয়েছেন,” বলেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদও (ডাকসু) অবস্থান নিয়েছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক সভায় ডাকসু তাদের এই অবস্থান জানায়।

“ডাকসু নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন,” বেনারকে জানান ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকিয়তা রক্ষায় নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতির পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন জাবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।

তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কাউকে চাপ দেওয়া হবে না বলে বেনারকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ((ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।

“আমরা কিন্তু কাউকে বাধ্য করিনি। আমরা বৃহত্তর স্বার্থে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে আহ্বান জানিয়েছিলাম," বেনারকে বলেন কাজী শহীদুল্লাহ।

অন্যরা অংশগ্রহণ করবে

দেশের ২৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলেও প্রথম থেকেই এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বিষয়ে দ্বিধা প্রকাশ করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বুয়েট এবং চবি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানালেও আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাবি এবং জাবি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

তবে এই চারটি প্রতিষ্ঠান না এলেও বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে সমন্বিত পরীক্ষার আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একমত হয়েছেন। আশা করছি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকেই পরীক্ষাটি আয়োজন করতে পারব। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের বিষয়ে বলতে পারছি না। তারা না আসলেও আমরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।”

একই দিন ঢাবি, জাবি এবং বুয়েটসহ ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে বৈঠকের পর ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছিলেন “আমরা আশা করছি, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।”

তার আগে গত ২৩ জানুয়ারি ইউজিসির সাথে উপাচার্যদের বৈঠকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বেনারকে বলেছেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদের দিক থেকে আপত্তি নেই। মঞ্জুরি কমিশনকে আমরা সন্মতি দিয়েছি।”

সমন্বিত পদ্ধতি কেমন?

সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাবে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকেরা। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হবে না। শিক্ষার্থীরা একটি পরীক্ষা দিয়েই সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সমন্বিত ভর্তি কার্যক্রমকে স্বাগত জানাই। এটি ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমাবে।"

“কিন্তু এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা আরও হতে পারে। ভর্তির নতুন পদ্ধতি যেন নতুন সমস্যা তৈরি না করে, এ জন্য খোলামনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে,” মত দেন এই অধ‍্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে চাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিভাগ অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির আলোকে প্রণীত প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মিলে তিনটি বিভাগে মাত্র তিনটি পরীক্ষা নেবে।

দেশের ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। যেদিন বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা হবে সেদিন শুধু ওই বিভাগের পরীক্ষা হবে। একইভাবে মানবিকে যেদিন পরীক্ষা হবে সেদিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগে পরীক্ষা হবে। একইভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে ব্যবসায় বিভাগেও।

সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষাও এর আওতায় হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ও মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে, যার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের চাহিদা ও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।