এক কোটি ৩০ লাখ মায়ের মুঠোফোনে যাবে সন্তানের উপবৃত্তির টাকা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2017.03.01
‘মায়ের হাসি’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘মায়ের হাসি’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্চ ০১, ২০১৭।
ফোকাস বাংলা

প্রকল্পের নাম ‘মায়ের হাসি’। সন্তানের উপবৃত্তির টাকা মায়ের মুঠোফোনে পৌঁছে যাবে, এ জন্যই এমন নামকরণ। টাকার পরিমাণ যদিও খুব বেশি নয়, তবে এর সুবিধাভোগীর সংখ্যা অনেক।

সরকারি হিসেবে, দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এঁদের মধ্যে ‘মায়ের হাসি’ প্রকল্পের আওতায় এসেছেন ১ কোটি ৩০ লাখ মা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গতকালই তাঁদের হাতে পৌঁছে গেছে সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে রূপালি ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশে’র মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বিতরণের এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। বার্তা সংস্থা বাসস এই খবর জানায়।

প্রাক–প্রাথমিক স্তরে মাসে ৫০ টাকা এবং পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের অন্যান্য স্তরে ​১০০ টাকা উপবৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতি তিন মাস অন্তর মোবাইল ফোনে এই টাকা পৌঁছে যাবে।

মায়েরা শিওর ক্যাশের এজেন্টের মাধ্যমে সময় ও সুযোগমতো এই টাকা ক্যাশ করে নিতে পারবেন। টাকা তোলার জন্য তাঁদের ঝামেলা পোহাতে হবে না বা যেতে হবে না দূরে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বেনারকে বলেন, “আগে একটি নির্দিষ্ট দিনে কার্ড নিয়ে উপবৃত্তির টাকা নিতে মায়েদের বিদ্যালয়ে যেতে হতো। কষ্ট করে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো। মোবাইলে টাকা সবার হাতে পৌঁছে যাওয়ায় মায়েদের কষ্ট দূর হবে।”

মহাপরিচালকের মতে, এর মাধ্যমে ভুয়া শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়ার অভিযোগও আর থাকবে না।

“কেউ এই প্রকল্পের বাইরে থাকবে না। যেসব মায়ের হাতে মোবাইল ফোন নেই, তাঁদের সবার হাতে তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য বিনা মূল্যে ২০ লাখ সিম এবং প্রত্যেক সিমে ২০ টাকা ফ্রি টক টাইম দেওয়া হবে,” জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দেশকে একটি শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বক্তৃতা করেন। মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ট্যাবের সুইচ চেপে এই কার্যক্রম উদ্বোধনের সঙ্গে দেশের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে যায়। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬শ’ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই টাকার যেন অপব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”

মোবাইলের মাধ্যমে মায়েদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ যুগান্তকারী বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা। এর ফলে মায়েদের কষ্ট কমার পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের উপদ্রব কমবে বলে মনে করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার বেনারকে বলেন, “আগের পদ্ধতিতে অনেকেই বৃত্তি পায়নি। নতুন যে পদ্ধতিতে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, এর মাধ্যমে টাকাটা যার প্রাপ্য তাঁর কাছেই পৌঁছাবে। এটি মধ্যস্বত্বভোগী উচ্ছেদ করার সবচেয়ে ভালো উপায়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যে প্রসার ঘটেছে, তার সঙ্গে এটা আরেকটি সংযোজন। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা পাচ্ছে।”

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুনে এই পদ্ধতিতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য রূপালী ব্যাংক ও শিওর ক্যাশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নির্দিষ্ট ফরম পাঠানো হয়।

শিক্ষার্থীদের পূরণ করা সেসব ফরমগুলোর তথ্য দিয়ে শিওর ক্যাশ একটি ডেটাবেইস তৈরি করেছে। এই ডেটাবেইস অনুযায়ী মায়েদের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছে। এসব মুঠোফোনেই উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হবে, যা কোনো ধরনের চার্জ ছাড়াই তোলা যাবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।