দীর্ঘ ভোগান্তি নিয়েও হাসিমুখে ঈদ যাত্রা
2017.06.23
ঢাকা

যাত্রাপথের দুর্বিষহ ভোগান্তি মাথায় নিয়েও হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এই ফেরা নাড়ির টানে, পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের আশায়।
ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল ও রেল স্টেশনগুলোতে। লাখ লাখ মানুষের প্রায় কাছাকাছি সময়ে ঘরে ফেরার তাগিদ ঝুঁকি তৈরি করেছে। শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনায় আট জেলায় মারা গেছে ১২ জন।
দীর্ঘ এক মাসের রোজা শেষে আগামী সোমবার চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারিভাবে ঈদের ছুটির (২৫-২৭ জুন) আগে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র-শনিবার) পড়ায় মূলত: বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে তা ব্যাপক হয়।
ঠিক কত লোক এ সময় রাজধানী ছেড়ে যায় সে হিসেব না থাকলেও ধারণা করা হয়, এ শহরের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ঈদে বাড়ি ফেরে। ২০১৬ সালের জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্ট রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ।
ঈদযাত্রার ভোগান্তি প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বেনারকে বলেন, “প্রতিবছর ঈদযাত্রার চিত্র আমরা দেখি, সে পরিস্থিতি কোনোভাবেই বদলায়নি। অর্থাৎ সার্বিক অব্যবস্থাপনার চিত্র দৃশ্যমান।”
তাঁর অভিযোগ, যাত্রাপথের নৈরাজ্যের সঙ্গে যারা জড়িত তাঁদের নিয়েই সরকারি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। ফলে সড়ক, নৌপথে নানা ধরনের নৈরাজ্য হলেও এই টিম কোনো নৈরাজ্য খুঁজে পাচ্ছে না।”
মহাসড়কে ভোগান্তি
শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার তিনটি আন্তনগর বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেল স্টেশনে মানুষের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। উপচে পড়া ভিড় একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটেও। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে যানজটের খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
ঘরমুখী যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানী থেকে যথাসময়ে বের হতে পারলেও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট ও ধীর গতির কারণে দীর্ঘ সময় ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট পেরোতেই কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সারা দিন ঘাটের আগে চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকা যানজট লেগেছিল।
সাতক্ষীরাগামী যাত্রী রুহুল কুদ্দুস বেনারকে বলেন, সকাল ১১টায় ঢাকার শ্যামলী কাউন্টার থেকে রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ফেরি পার হতে পারিনি। অতিরিক্ত গাড়ির চাপই মূলত কারণ।
পাটুরিয়া ঘাট এলাকার ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক মুকতার হোসেন বেনারকে জানান, “বাসসহ যাত্রী পরিবাহী যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় সকাল থেকে প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহিনী ট্রাক ঘাটে আটকা পড়েছে। এটাও যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ।”
এদিকে ঈদযাত্রা শুরুর আগে থেকে যানজটের খবর পাওয়া যাচ্ছিল উত্তরাঞ্চলমুখী মহাসড়কগুলোতে। শুক্রবারও ছিল একই চিত্র। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে কয়েক কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে দীর্ঘ যানজটের খবর দিয়েছেন যাত্রীরা।
রাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান বেনারকে জানান, “বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী পৌঁছাতে পেরেছি। সাধারণ সময়ে যা ৫-৬ ঘণ্টায় আসা যায়।”
বঙ্গবন্ধু সেতুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ জ্যাম পোহাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে মহাসড়কে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণেই তা ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “টানা ভারী বর্ষণের মধ্যেও মহাসড়কগুলো সচল রয়েছে। তবে জেলা সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবারে ঈদযাত্রা খুব স্বস্তিদায়ক হবে, তেমনটি দাবি করতে পারছি না।”
রেলেই স্বস্তি
সড়কের যাত্রীদের মুখে দুর্বিষহ যাত্রার কথা শোনা গেলেও স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ছেন রেলপথের যাত্রীরা। ট্রেনগুলোও ছাড়ছে সময়সূচি অনুযায়ীই। রয়েছে ঈদ যাত্রার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও। তবে ট্রেনগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি। ঘরমুখী মানুষেরা আসন না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ির পথে রওনা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “সকল ট্রেন সঠিক সময়ে যাত্রা করেছে। এতে যাত্রীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।”
দুর্ঘটনায় নিহত আট
রাজশাহীর মোহনপুরে গতকাল শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার, রাজশাহীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর মনসুর রহমান (৬০) নিহত হয়েছেন। বগুড়ার শেরপুরে গতকাল দুপুরে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন চারজন।
এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা ও আশুলিয়ায় এবং কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও সাতজন।