খালেদা-তারেক ছাড়াও নির্বাচনে সমস্যা হবে না বিএনপি’র
2018.02.14
ঢাকা

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দীর্ঘ কারাবাস ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতেও আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলীয় নেতৃবৃন্দ।
তাঁদের মতে, নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার কৌশল হিসেবে হরতাল অথবা সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। যে কোনও ধরনের সহিংসতা করলে তাঁরা পুলিশি বাধার মুখে পড়তে পারে।
তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলটি সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। যে কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রতিদিনই বাড়ছে দলীয় নেতাকর্মীদের ভীড়।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর বিএনপি রাজপথে সেভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার পর দলটি শান্তপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে, এসব কর্মসূচিতে নেতা–কর্মীদের অংশগ্রহণও বাড়ছে।
খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়ার পর দলের মধ্যে তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে দলীয় বিভাজন আপাতত নেই। খালেদা জিয়ার মনোনীত যে কোনও নেতাকে আগামী নির্বাচনে দলের নেতাকর্মী ও জনগণ মেনে নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “যে কোনো অবস্থাই হোক বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। তাঁরা গতবারের মতো এবার আর আওয়ামী লীগকে ওয়াকওভার দেবে না।”
তাঁর মতে, খালেদা জিয়া জেল থেকেই তাঁর মনোনীত নেতার মাধ্যমে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সংবিধান অনুযায়ী, এ বছর ডিসেম্বর অথবা আগামী বছর জানুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বেনারকে বলেন, বিএনপিতে দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি কট্টরপন্থী ও আরেকটি হলো উদারপন্থী।
তাঁর মতে, দলের কট্টরপন্থী গ্রুপ ফোর্স প্রয়োগ করে নির্বাচন ঠেকানোর পক্ষে। তবে উদারপন্থীরা এ ধরনের কাজের পক্ষে নন।
“বিএনপি গতবারের মতো এবার আর সহিংস কর্মসূচি দিচ্ছে না। তাঁরা খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়ার পর একটি হরতালও দেয়নি। এর অর্থ হলো দলের নেতৃত্ব উদারপন্থীরা ডমিনেট করছেন,” বলেন ড. শান্তনু।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়। যেকোনও দেশেই ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে জনগণের একটি অংশ থাকে। তাই বিএনপি মনে করে আগামী নির্বাচনে তাঁদের ভালো সুযোগ আছে এবং তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।”
ড. শান্তনুর মতে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি চাইবে যত বেশি সম্ভব বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসুক।
ড. আতাউর রহমান বলেন, ২০০৭-০৮ সালে মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুইয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়। খালেদা জিয়া বিবৃতির মাধ্যমে মান্নান ভুইয়াকে বরখাস্ত করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নতুন মহাসচিব নিয়োগ করেন।
দলের নেতাকর্মীরা নতুন মহাসচিবকে মেনে নেয়।
“তাই খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ থাকলে এবং তারেক রহমান দেশে না ফিরলেও খালেদা জিয়ার মনোনীত যেকোনও নেতা আগামী নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। এতে দলের জনপ্রিয়তা কমবে না,” বলেন আতাউর রহমান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটারদরে কাছে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে দলীয় নির্বাচনী প্রতীকটি বড় বিবেচ্য বিষয়।”
ড. আতাউরের মতে, সরকার চাইবে, বিএনপি সহিংসতা করুক। যদি করে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ অতীতের মতো তাঁদের কঠোরভাবে দমন করবে।
“তাই তাঁরা, তাঁদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিযে যাবে, যাতে আরো বেশি নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে আসে,” বলেন ড. আতাউর।
তিনি বলেন, দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ তারেককে পছন্দ করেন না। আবার জুনিয়র নেতারা তারেকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
তবে খালেদা জিয়ার কারাবরণের পর দলের এই বিভাজন আপাতত মিটে গেছে। খালেদা জিয়া ও তারেকের অনুপস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ও মহাসচিব বর্তমানে দলকে ধরে রেখেছেন, বলেন ড. আতাউর রহমান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, তত্বাবধায়ক সরকার বা সহায়ক সরকার থাকুক বা না থাকুক বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।
খালেদা জিয়া ও তারেকের অনুপস্থিতি আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারবে না, তিনি বলেন।
“যেহেতু খালেদা জিয়া দেশেই আছেন, সেহেতু তিনি জেলখানা থেকে দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন,” বলেন ড. নিজাম। জেলখানায় তাঁর সঙ্গে নেতারা দেখা করতে গেলে তিনি দলীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন।
আর দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর নির্দেশনা মেনে নেবে বলে মনে করেন তিনি।