৭ মার্চের জনসভায় শক্তি ও সামর্থ্যের জানান দিলো আওয়ামী লীগ
2018.03.07
ঢাকা

লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে বুধবার বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উদ্যাপন করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশের কারণে অচল হয়ে পড়ে পুরো ঢাকা শহর।
জনসভাস্থলের নিরাপত্তা ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের জন্য শাহবাগমুখী পথ বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কসহ আশপাশের অলিগলি পর্যন্ত যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে।
তবে সমাবেশের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তির জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে গত বেশ কিছু সমাবেশের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানেও প্রধান অতিথির ভাষণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “যারা এতিমদের টাকা চুরি করেছে তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে জন্য সবার কাছে আহ্বান জানাই।”
আওয়ামী লীগ যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভোট চাইছে সেই সময় বিএনপির সিনিয়র নেতারা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ লোপাটের কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে দেখতে জেলখানায় যান।
১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ গত বছর ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এবারই প্রথম দিবসটি ঘটা করে পালন করা হয়। এ উপলক্ষে বিরাট এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
তবে এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মূলত নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যের জানান দিলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “৭ মার্চের ভাষণ উদ্যাপনে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে রাজপথে তার শক্তি দেখাল।”
তিনি মনে করেন, “শেখ হাসিনা সঠিকভাবেই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। পক্ষান্তরে বিএনপি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক অবদান জনগণকে বোঝাতে পারছে না। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আছে।”
সকাল থেকেই যানজট
সাত মার্চের জনসভা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতা কর্মী সকাল থেকেই বাস, ট্রাক, পিকআপে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা হন।
আবার আশপাশের এলাকাগুলো থেকে নেতা কর্মীরা হেঁটে মিছিলসহ জনসভাস্থলের দিকে যাওয়ার কারণে শহরের যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাত্রীদের।
যানজটের কথা মাথায় রেখে পরিবহন কোম্পানিগুলো বুধবার ঢাকায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষেরা।
মিরপুর সাড়ে এগারো থেকে মতিঝিল যেতে সকাল ১১টায় বাসে ওঠেন হালিম মোহাম্মদ (৩৫)।
“দুই’শ মিটার যাওয়ার পর থেকে গাড়ি ক্রমাগত মিছিলের কারণে আটকা পড়ছিল। এভাবে চলতে চলতে আড়াই ঘণ্টা পর বাংলামোটর পৌঁছালে মনে হচ্ছিল বাস আর যাবে না। বাস থেকে নেমে আমার কাজ ফেলে রেখে ফিরে আসি,” বেনারকে বলেন তিনি।
হালিম বলেন, “তীব্র গরমে নারী-শিশুসহ যাত্রীরা বাস ও বেবি ট্যাক্সিতে হাঁসফাঁস করছিলেন। বিশেষ করে বাচ্চাদের কান্না খুবই কষ্টদায়ক।”
বিহঙ্গ বাসের এক কর্মী মো. আলম বেনারকে বলেন, “নেতা কর্মীরা বাসে উঠে পয়সা দিতে চায় না। আবার কন্ডাক্টরদের মাইরধর করে। তাই কোম্পানি আজ বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বেলা আড়াইটা থেকে মূলত জনসভা শুরু হয়। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সমাবেশে বলেন, “সাত মার্চের মতো বিশেষ দিনগুলোর কর্মসূচি নির্দিষ্ট দিনেই পালন করতে হবে।”
জনগণের কষ্ট হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, “প্লিজ, সহনশীল দৃষ্টিতে দিবসটি পালনে সহায়তা করবেন।”
উন্নয়নের স্বার্থে আ. লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান
প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে। আমাদের লক্ষ্য জনগণের উন্নয়ন। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।”
“কিন্তু এর আগে যারা সরকারে ছিল, সেই জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেশ তো এত উন্নত হয়নি। তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে জন্য সবাই সতর্ক থাকবেন,” বলেন শেখ হাসিনা।
দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।
খালেদার সঙ্গে জেলখানায় নেতাদের সাক্ষাৎ
বুধবার রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতারা।
সাক্ষাতের জন্য সোয়া ৩টায় কারাগারে প্রবেশ করে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে এটুকু বুঝতে পেরেছি, তাঁর মনোবল অত্যন্ত উঁচু ও সত্যের পথে। সত্য প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করেন তিনি।”
ফখরুল বলেন, “খালেদা জিয়া কারও উসকানিতে না পড়ে নিজের দলকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।