সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চায় বিএনপি
2018.04.17
ঢাকা
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তবে তাঁদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই দাবি জানায়।
আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েনের দাবি জানানোর পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করা এবং গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারসহ ২০ দফা লিখিত দাবি ইসির সামনে তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা।
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে আগামী ১৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি’র দাবিগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “শুধু খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়, স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত আপাতত নেই। তবে এই নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েন থাকবে।”
দুই সিটির নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহৃত হবে বলেও তিনি জানান।
বৈঠকের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু প্রস্তাব কমিশন আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাসহ অনেক সুপারিশ ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করা হবে।”
“তবে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ ও পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদকে প্রত্যাহারের যে দাবি বিএনপি করেছে, সে বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে,” বলেন হেলালুদ্দিন।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই। ইভিএম এর মতো প্রযুক্তি আইনানুগভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে। এরপরও এ নিয়ে আপত্তি থাকলে বিএনপিকে আবারও এসে ইভিএম দেখার অনুরোধ করা হয়েছে।”
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনকে সামনে রেখে কমিশনের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। দলের মূল দাবি, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে যেন সেনা মোতায়েন করা হয়।
তিনি বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে।”
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আট সদস্যের ওই দলে আরও ছিলেন; স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রশ্ন
এর আগে থেকেই জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। গত বছর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপিসহ ১১টি দল ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ আরও ১৪টি দল যেকোনো ফরম্যাটে নির্বাচনে সেনা রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ ৮টি দল সেনা মোতায়েন না করার প্রস্তাব করেছে।
তবে বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দিক থেকে এই ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হচ্ছে না।
জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনও ইতিবাচক মতামত প্রকাশ করে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা গত ৮ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “অতীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন আমরা একেবারেই চাই না।”
আওয়ামী লীগ কি ভাবছে?
দুই সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জন্য বিএনপি’র দাবি’র ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ গতকাল বেনারকে বলেন, “এগুলো অপ্রয়োজনীয় দাবি। শুধু মাত্র রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টির জন্য এ ধরনের দাবি করা হচ্ছে।”
জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কী মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। সরকার ও নির্বাচন কমিশন আইন ও সংবিধান অনুযায়ী যা করা দরকার তাই করবে।”
এর আগে গত ৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। কিন্তু সেনাবাহিনী থাকবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই ইসি চাইলেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সেনাবাহিনী শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হবে কিনা সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত হবে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেছেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া সম্ভব নয়। আইন ও সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনী কিংবা অন্য কোনো বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার সুযোগ নেই।”