সিটি নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেবেন সাংসদেরাও
2018.05.24
ঢাকা

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে আচরণবিধির সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে এ সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
“সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালায় ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্যদের নাম উল্লেখ ছিল, আজকের বৈঠকে সেটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে সব সিটি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা অংশ নিতে পারবেন,” জানান তিনি।
গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এমন সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এমন একটি সময়ে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে যখন আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা। এর পর পরই হবে আরও অন্তত তিনটি সিটি নির্বাচন।
ইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে আসন্ন সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির সুযোগ থাকবে না বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “নতুন এই সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিবন্ধক হবে। এর ফলে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হবে না।”
তাঁর মতে, সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দেওয়ায় ক্ষমতাসীনেরাই বেশি সুযোগ পাবেন। এ নিয়ে রাজনীততে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হবে।
ইসির এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেনারকে বলেন, “এটা আইন এবং সংবিধানের পরিপন্থী। সরকার নির্বাচনকে নিজেদের মনের মতো করার জন্য অর্থাৎ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন না করার তাদের যে অভিপ্রায়, তারই বহিঃপ্রকাশ এই সংশোধনী।”
তাঁর মতে, “তারা (সরকার) লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায় না। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে তারা বরং নির্বাচনের মাঠ আরও অসমতল করে তুলল।”
রিজভী বলেন, “সরকারি দলের এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতারই অপব্যবহার করে ফলাফল নিজেদের দলের অনুকূলে আনার চেষ্টা করবেন। সেখানে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না।”
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, “সিটি করপোরেশন আচরণ বিধিমালায় বিভিন্ন ধরনের ১১টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী রোববার এসব সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।”
এই আচরণবিধি আইন না হওয়ায় এটা সংসদে উত্থাপনের প্রয়োজন হবে না। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে এসব সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে পারবে ইসি।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ইসি এই সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নিলেও আসন্ন এ নির্বাচন থেকে সংসদ সদস্যরা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইসি সচিব।
“কারণ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল আগেই ঘোষিত। আর এই সংশোধনীটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিংয়ের প্রয়োজন হবে। কাজেই এটি গাজীপুরে কার্যকর নাও হতে পারে,” বলেন হেলালুদ্দীন।
বিদ্যমান বিধিমালায় তফসিল ঘোষণার পর থেকে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া বা প্রবেশের সুযোগ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হলে তিনি ভোট দিতে যেতে পারেন।
নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই এমপিদের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করে তাঁদের প্রচারণার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে “সংসদ সদস্য পদ লাভজনক পদ না হওয়ায় তাঁদের ওপর থেকে এই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে,” জানান ইসি সচিব।
সংসদ সদস্যপদ লাভজনক নয় কেন—এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যায় ইসি সচিব বলেন, “তাঁরা (সংসদ সদস্যরা) কোনো অফিস হোল্ড করেন না, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না, কিনে ব্যবহার করেন। তাঁদের সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তা যুক্ত নেই।”
তবে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ থেকে তাঁদেরকে ইস্তফা দিতে হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই নির্বাচন কমিশনের কাছে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণায় সংসদ সদস্যদের অংশ নেওয়ার প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বিরোধী দল।
তবে ইসি সচিব হেলালুদ্দিনের মতে, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ইসির স্টেকহোল্ডার। তাঁদের থেকে অনেক প্রস্তাব আসে। যে বিষয়টি নির্বাচন কমিশন যুক্তিযুক্ত মনে করে, সেটি বিবেচনায় নেয়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।”