গাজীপুর নির্বাচন: ধরপাকড়ের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.06.21
ঢাকা
180621_Gazipur_Election_1000.jpg গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রচারণা। ২১ জুন ২০১৮।
বেনারনিউজ

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে রাতের আঁধারে বিরোধী দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের মুখোশধারী ব্যক্তি ও সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করছে বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে এক লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, বুধবার রাতে কমপক্ষে তাঁর নয়জন নির্বাচনী এজেন্টকে ধরে নিয়ে গেছে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের (ডিবি) পুলিশ ও কিছু মুখোশধারী ব্যক্তি।

আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক ও বিএনপি’র হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে গাজীপুর ও ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রধান দুই দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

হাসান সরকারের অভিযোগ অনুযায়ী, ডিবি পুলিশ যাদের ধরে নিয়ে গেছে তারা হলেন: কাশিমপুর অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব শাহীন ও সদস্য শাহজাহান, কোনাবাড়ী কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মিলন মিয়া ও সদস্য তাইজুল ইসলাম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বালিয়ারা কেন্দ্র কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ, কাউলতিয়া অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহ আলম, টঙ্গী ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আবু সায়েম এবং ৪০ নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ।

অভিযোগপত্রের একটি কপি বেনারনিউজের কাছে রয়েছে।

কীভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলতে গিয়ে হাসান সরকার বলেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব আব্দুস সালামের বাড়ির গেট ও দরজা ভেঙে পুলিশ ঘরে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে তিনজন ছিল মুখোশ পরা। সালামকে বাড়িতে না পেয়ে তার ভাই আব্দুস সামাদকে আটক করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, একইভাবে কাউলতিয়ার শাহ আলম ও পুবাইলের আবু সায়েমকে আটক করে সাদা পোশাকের পুলিশ। বাসনের আব্দুস সামাদ, কাউলতিয়ার শাহ আলম ও পুবাইলের আবু সায়েমের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশ বিরোধী দলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনো নেতা কর্মীদের হয়রানি করেনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “নির্বাচনের আগে পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা হলো বিএনপি’র কৌশল। আপনার কি বিশ্বাস হয় যে পুলিশ মুখোশ পরে লোক গ্রেপ্তার করবে? গতবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁদের লোককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “কিন্তু নির্বাচনে কী হলো? তাঁদের প্রার্থী জয়লাভ করল। সুতরাং, তাদের কথা শুনে লাভ কী? নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।”

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬। এর মধ্যে হাসান উদ্দিনের সরকারের টঙ্গী এলাকায় রয়েছে তিন লাখ ৬৫ হাজার ৯৫২ জন।

হাসান সরকার বেনারকে বলেন, “সরকার দলীয় প্রার্থীকে জেতাতেই গ্রেপ্তার, জেল-জুলুম, হয়রানি করা হচ্ছে। গাজীপুরে ধানের শীষ জয় লাভ করেছিল। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জয়লাভ করব।”

আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বেনারকে বলেন, “বিএনপি’র প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরে কোনো উন্নয়ন করেননি। আমি নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে একটি উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলব। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমাকেই নির্বাচিত করবে গাজীপুর।”

দুই প্রধান দলের প্রার্থীরা বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী আগামী ২৩ জুন মধ্যরাতের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ হবে।

আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়ন পাচ্ছেন। দুজনেই বর্তমান মেয়র। আর বরিশালে মনোনয়ন পাচ্ছেন মজিবুর রহমান সরোয়ার। তিনিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। তবে প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিন সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৭ জন মেয়র পদপ্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয় দলের স্থায়ী কমিটি। এর মধ্যে মজিবুর রহমান সরোয়ার ছাড়া বাকি ১৬ জন দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বেনারকে বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলো দুই দলের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই নির্বাচন দুই দলের জনপ্রিয়তা কেমন সে ব্যাপারে জনগণ ধারণা পাবে। আর এই নির্বাচনে যারা ভালো করবে তারা এই ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।