তিন সিটি নির্বাচন: হয়রানির অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীদের
2018.07.13
ঢাকা

সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের আনুকূল্য পাচ্ছে।
প্রতীক বরাদ্দের পর গত মঙ্গলবার থেকে ওই তিন সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র প্রার্থীরা ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন।
স্থানীয় রিটার্নিং অফিসারদের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তাঁরা জানিয়েছেন, প্রচারণায় বাধা দেওয়ার পাশপাশি তাঁদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মারধর, তল্লাশির নামে হয়রানি এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
“সরকারি দলের নেতাকর্মীরা মোটর-সাইকেলের বহর নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে,” শুক্রবার দুপুরে বেনারকে বলেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার।
এর আগে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেটের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী এবং রাজশাহীর প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও অভিযোগ করেন, তাঁদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজছে পুলিশ।
এই দুই শহরের সরকারি দলের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বরিশালের সরোয়ারও দাবি করেন, ‘ওয়ারেন্ট’ ছাড়াই বিএনপির লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
তবে ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান আরজু বেনারকে বলেন, “পুলিশকে আমাদের পক্ষ থেকে বলা আছে, নির্বাচনী এলাকার কাউকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না।”
“গত বৃহস্পতিবার দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং তিন সিটির রিটানিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানেও এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে,” জানান আসাদুজ্জামান।
“নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে নিরপরাধ কাউকে যাতে হয়রানি না করা হয়, সে ব্যাপরে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে,” উল্লেখ করেন ইসি সচিবালয়ের এই যুগ্মসচিব।
তিনি আরো জানান, নির্বাচনের আগে তিন সিটি পরিদর্শনকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্যান্য কমিশনারেরা স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের সাথে এ নিয়ে পুনরায় কথা বলবেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি আছে এবং তা থাকবে।”
গ্রেপ্তার নিয়ে ইসি ও পুলিশের দ্বিমত
ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলো ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন লিখেছে, বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার না করার ব্যাপারে ইসি’র নির্দেশনার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর ফলে ওই তিন শহরে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো নৈমিত্তিক অপরাধ দমন কঠিন হয়ে যাবে বলে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁদের আপত্তির মুখে ইসি ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
একইসঙ্গে তারা কোনো প্রার্থীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ না করা নির্দেশ দিয়েছে। আটকের পর পুরনো মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার না দেখাতেও বলা হয়েছে। বেনারকে ইসি’র কর্মকর্তা আরজু বলেন, “এটা আমাদের নির্দেশনা। কিন্তু এখন মাঠ পর্যায়ে কী হচ্ছে তা আমরা খুব বেশি জানি না।”
বরিশালের সরোয়ার বেনারকে বলেন, “আমরা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ‘রেজাল্ট’ পাইনি। এখনই বৈষম্য টের পাচ্ছি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বুলবুল অভিযোগ করেন, “পুলিশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সরাসরি সহযোগিতা করছে।”
সিলেটের বিএনপির আরিফুলের পক্ষ থেকেও বেনারকে একই তথ্য দেয়া হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার সিইসি বলেছেন, “সিটিগুলোতে নির্বাচনের পরিবেশ ঠিকঠাক রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সেখানে কোনও ঝুঁকি বা আশঙ্কার বিষয় নেই।”
ইসি’র লিখিত নির্দেশনা পায়নি পুলিশ
আলোচ্য বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার শুক্রবার সন্ধ্যায় বেনারকে বলেন, “ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি সভায় আলোচনায় হয়েছে। তবে আমরা এখনও লিখিত কোনো নির্দেশনা পাইনি।”
“ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের সুযোগ না থাকলে দেখা যাবে আশেপাশের সব জেলার ওয়ারেন্টের আসামীও এখানে এসে নিশ্চিন্তে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তবুও ইসি যা বলবে, আমরা সেটাই করব,” যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াও বেনারকে বলেন, “ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার না করার কথা মুখে বললেই হবে না। কারণ আমরা সিআরপিসি লঙ্ঘন করতে পারি না। অতএব মিটিংয়ের কার্যবিবরণী পাওয়ার পর বিষয়টি বোঝা যাবে।”
বিএনপি ‘রাজনৈতিক’ কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে—এমনটি মনে করেন আরএমপি এবং এসএমপি কমিশনার। হাফিজ দাবি করেন, “আমরা কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ করছি না।” আর কিবরিয়ার বক্তব্য, “তাঁদের (বিএনপির) অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
“রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি, এটি আমরা খতিয়ে দেখছি,” বলেন আরএমপি কমিশনার।
শঙ্কার কারণ খুলনা ও গাজীপুরে নির্বাচন
বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব সরোয়ার বেনারকে বলেন, “খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগেও ইসি সব দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু দুই শহরেই নির্বাচনের আগে আমাদের নেতা-কর্মী ও এজেন্টদের ধরপাকড় করা হয়েছিল। যে কারণে আমাদের শঙ্কাটা বেড়ে গেছে।”
যদিও ইসির একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেন, “খুলনা ও গাজীপুরে যে হাজার হাজার অভিযোগ এসেছে তার সবই সঠিক নয়, প্রচুর ভুয়া অভিযোগও এসেছে।”
মেয়র প্রার্থী ১৮, কাউন্সিলর ৫৩০
তিন সিটির এই নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রতীকে। তিন সিটিতে মেয়র পদে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮ জন।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জনসহ মোট ৫৩০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে তিন সিটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৫৪৮ জন।