বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমলেও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি: ইইউ
2017.10.17
ঢাকা

আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে একটি স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর তাগিদ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ)।
গত সোমবার প্রকাশিত ২০১৬ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার অবস্থার ওপর ইউ এর এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানানো হয়।
রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমাগত কমলেও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি এবং গণতান্ত্রিক চর্চার পরিসর সংকুচিত হয়েছে।
সংসদে পাশ করা কিছু আইনের কারণে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কমে যাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ ইউ’র প্রতিবেদনটিকে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন বললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, রিপোর্টটি প্রকৃত অবস্থার চেয়ে আলাদা।
“ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের তাগিদ দিচ্ছে,” প্রতিবেদনটিতে বলা হয়।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইউ প্রতিবেদনটিতে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন হয়নি বলে মত দিয়েছে।
“দেখুন এগুলো মনগড়া কথা। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ নয়। আমরা জঙ্গিদের হাত থেকে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য কত কিছু করলাম। আর এখন বলা হচ্ছে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়,” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন।
“আমরা এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করি। দেশের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন,” তিনি বলেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দেশের প্রধান দুই দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীত অবস্থানে। বিএনপি কাজী রকিবউদ্দীন আহমাদের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন বলে উল্লেখ করে গত ১০ম সংসদ নির্বাচন বয়কট করে।
এ বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ শক্তিশালী করা এবং সকলকে অন্তর্ভুক্ত করা বাংলাদেশের জন্য প্রধান কয়েকটি চ্যালেঞ্জের একটি।
ইউ বলছে, “বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে দারিদ্র্য কমে এসেছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হলেও মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব হয়নি ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
“প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা অবস্থা, সংকুচিত গণতান্ত্রিক পরিবেশ, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমসহ ক্রমাগত নিম্নমুখী নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং বিরোধী দল ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপ শঙ্কার বিষয়,” প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০১৬ সালে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। জঙ্গিরা ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয়ে হামলা চালায়, ব্লগার, সাংবাদিক, শিক্ষক, ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী নাগরিক হত্যা করে। তার সঙ্গে যোগ হয় গুম। প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠে। এর ফলে আইনের শাসন ও আইন প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।
নির্বাহী বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক হলেও একটি প্রকৃত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিচার বিভাগ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারেনি। পুঞ্জিভূত সমস্যার কারণে জনগণের বিচার পাওয়ার অধিকার মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ে।
বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন?
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বেনারকে বলেন, “ইউ এর এই প্রতিবেদন দেশের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরেছে। আমি এই প্রতিবেদনটি সমর্থন করি।”
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন খুবই জরুরি। আবার এই নির্বাচনের জন্য স্বাধীন, দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পূর্বশর্ত।
“আমরা এই দাবি বরারব করে আসছি যাতে ভবিষ্যতে একটি পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে,” বলেন মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ কমে আসছে- একথা সত্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দীন আহমদ বেনারকে বলেন, ইউ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে, প্রকৃত অবস্থা জেনে তবেই করে থাকে।
“তাই, এই রিপোর্ট সঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজন ও ইনটলারেন্স এমন অবস্থায় গেছে যে আপনি কাউকে দিয়ে স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারবেন না,” তিনি বলেন।
“তবে এ কথা ঠিক গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি স্বাধীন ও দল-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পূর্বশর্ত,” যোগ করেন তিনি।