হাজারীবাগের সব ট্যানারি বন্ধ করতে আদালতের নির্দেশ
2017.03.06
ঢাকা

স্থানান্তর না করে এখনো হাজারীবাগে থেকে যাওয়া ট্যানারিগুলোকে অবিলম্বে বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। কারখানাগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার ‘প্রাণ’ বুড়িগঙ্গা নদীকে বর্জ্যের বিষাক্ত প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য সাভারে চামড়া শিল্প নগরী স্থাপন করে সরকার।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৩টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫৪টি ট্যানারি এখনো হাজারীবাগে রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ ট্যানারি বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। আর স্বরাষ্ট্রসচিব, শিল্প সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে এ কাজে সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেলার পক্ষে আদালতে শুনানিতে অংশ নেন ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রইস উদ্দিন আহমেদ শুনানি করেন।
পরে রিজওয়ানা হাসান বেনারকে বলেন, “বেলার আবেদনের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে ট্যানারিগুলো বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৬ এপ্রিল এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। আগামী ১০ এপ্রিল বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য আসবে।”
২০০১ সালে এক রায়ে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এরপরেও বহুবার ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ছয় মাস সময় দেয় হাইকোর্ট।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আদালতের ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১১ সালে ৩০ এপ্রিলের পর হাজারীবাগে ট্যানারি চালানোর অনুমোদন নেই। এরপরেও আদালতের অনুমতি ছাড়াই সরকার চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ট্যানারিগুলোকে সময় দিয়েছে। বেলা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করে।”
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী রইস উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “এ পর্যন্ত ৪৩টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় আদালতকে জানিয়েছে। এ ছাড়া হাজারিবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ বন্ধে গত ৩১ জানুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অধিদপ্তরের কাছে সহযোগিতা চায়।”
এ বিষয়ে একাধিক ট্যানারি মালিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে এই রায়ের মাধ্যমে ট্যানারিগুলো সরানোর বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আসা যাবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ ও আইনজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বেনারকে বলেন, “ট্যানারিগুলো সরানোর বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। সর্বশেষ আদালতের আদেশ পালনের জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাজেই হাজারীবাগে আর ট্যানারি চালানোর মতো পরিস্থিতি থাকবে না।”
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বেনারকে বলেন, “আদালতের নির্দেশ অমান্যকারী বা আইন লঙ্ঘনকারী প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হবে না আশা করি।”
এর আগে গত বছরের জুনে হাইকোর্টের এক আদেশে বলা হয়, হাজারীবাগ এলাকা থেকে ট্যানারি না সরালে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এরপর ট্যানারি মালিকদের আপিলে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে আপিল বিভাগ। কিন্তু কারখানা না সরালেও মালিকেরা জরিমানার সেই টাকা পরিশোধ করেননি।
বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের দৃষ্টিতে আনা হলে দেখা যায়, ১৫৪টি ট্যানারির প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা হিসেবে এ পর্যন্ত মোট ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। গত ২ মার্চ দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই ১৫৪টি ট্যানারিকে বকেয়া জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত।