পরিবেশ সুরক্ষায় শকুনের বিলুপ্তি রোধের চেষ্টা
2017.03.13
ঢাকা

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শকুনের বিলুপ্তি রোধের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো শকুন উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এই কেন্দ্রে চিকিৎসার পর আটটি শকুন প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন-বাংলাদেশ—এর যৌথ তত্ত্বাবধানে অসুস্থ আটটি শকুনকে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা শেষে গত মঙ্গলবার দিনাজপুর জেলার সিংড়া বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শকুন উদ্ধার কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, হিমালয় অঞ্চলের কম বয়সী শকুনগুলো দিনাজপুর এলাকায় এসে খাদ্যাভাবে অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সহায়তায় সেগুলোকে বন বিভাগ ও আইইউসিএন দিনাজপুরে স্থাপিত শকুন উদ্ধার কেন্দ্রে আনা হয়। শকুনগুলোকে বাঁশের তৈরি বিশাল খাঁচায় রেখে খাবার ও ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়।
“অসুস্থ শকুনগুলোকে দুই মাসের অধিক সময় ধরে চিকিৎসার পর আমরা মঙ্গলবার দিনাজপুরের সিংড়া বনে ছেড়ে দিয়েছি। শকুনগুলো চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ। এখন তারা প্রকৃতিতে বেঁচে থাকতে পারবে,” বেনারকে বলেন আইইউসিএন’র বাংলাদেশ মিশন প্রধান ইশতিয়াক উদ্দীন আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ড. মঞ্জুরুল হান্নান খান বেনারকে বলেন, “আশির দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে হাজার হাজার শকুন দেখা যেত। কিন্তু গবাদিপশুর শরীরে ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার শুরুর পর থেকে শকুনের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে আনুমানিক ৩০০ শকুন আছে।”
তিনি জানান, “ডাইক্লোফেনাক প্রয়োগ করা গবাদিপশু মরে গেলে সেই মাংস শকুন খায়। এই মাংস খেয়ে শকুনের কিডনি নষ্ট হয়ে মারা যায়। আবার ডাইক্লোফেনাকযুক্ত মাংস খাওয়ার পর শকুনের ডিমের খোসা পাতলা হয়ে যায়; বাচ্চা ফোটে না।”
“তবে আশার কথা হলো, সরকার ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করেছে। শকুন মরা প্রাণী খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে,”বলেন হান্নান খান।
ড. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “শকুনদের কোনো ভৌগোলিক সীমানা নেই। এরা বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ পুরো অঞ্চলে বিচরণ করে। শীতকালে হিমালয় অঞ্চলের শকুনগুলো বাংলাদেশর দিনাজপুর ও আশপাশের এলাকায় আসে। এখানে এসে শকুনগুলো খাদ্যাভাবে অসুস্থ হয়ে যেত। আর এ কারণেই দিনাজপুর অঞ্চলে শকুন উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।”
“আগে অসুস্থ শকুন মাটিতে পড়ে গেলে গ্রামবাসীরা মেরে ফেলত। তবে বন বিভাগের সহায়তায় আমরা জনগণকে শকুনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে পেরেছি। এখন আর গ্রামবাসীরা শকুন মেরে ফেলে না,” বলেন তিনি।
ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার সুন্দরবন ও সিলেট এলাকায় শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে শকুন সংরক্ষণ এক ধাপ এগিয়েছে।”
জানা যায়, বাংলাদেশে হোয়াইট রাম্প প্রজাতির শকুন দেখা যায়। তবে শীতকালে বৃহত্তর দিনাজপুর এলাকায় হিমালয়ান শকুনও দেখা যায়। হিমালয় এলাকায় তুষারপাত হলে এরা বৃহত্তর দিনাজপুর এলাকায় আশ্রয় নেয়। কারণ এখানকার তাপমাত্রা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক কম।
দিনাজপুর অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল সরকার সাংবাদিকদের জানান, “বন বিভাগ শকুন রক্ষার জন্য সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদের শকুনকে রক্ষা করতে হবে।”
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. মালেক (৭০) বেনারকে জানান, আগে একটি গরু মরার সঙ্গে সঙ্গে শত শত শকুন এসে মরা গরু ঘিরে ফেলত। এখন গত দশ বছরে একটা শকুনও দেখা যায় না। বাংলাদেশের দুধের রাজধানী হিসেবে খ্যাত শাহজাদপুর অঞ্চলে প্রচুর গরু মারা যায়। মরা গরু-ছাগল মাঠে, ঘাটে-বিলে পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত করে।
শকুন রক্ষা প্রসঙ্গে গবেষক মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, “শকুন বড় বড় গাছে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে। যদি আমরা বন সংরক্ষণ করতে না পারি তাহলে শকুন রক্ষা করা যাবে না। তবে ডাইক্লোফেনাক বন্ধ একটি ভালো উদ্যোগ।”