পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য সরকারের কর ছাড়

কামরান রেজা চৌধুরী
2017.06.05
ঢাকা
জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন’ কারখানার জন্য শতকরা একভাগ কর কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন’ কারখানার জন্য শতকরা একভাগ কর কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জুন ০১, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

দেশের শিল্প দূষণমুক্ত করতে ও লো-কার্বন অর্থনীতি গড়তে প্রথমবারের মতো পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য কর ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পরিবেশবিদ ও কারখানা মালিকেরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন উৎসাহিত হবে।

গত বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেন যে, পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন’ কারখানার জন্য কর অন্যান্য কারখানার চাইতে শতকরা একভাগ কম হবে। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগেভাগে অর্থমন্ত্রী এই ঘোষণা দিলেন।

“আমরা এবারের কর নীতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পৃক্ত করেছি। তৈরি পোশাক খাতের যে সকল কোম্পানি-করদাতার কারখানার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন’ থাকবে, সেসব কোম্পানির কর হার ১৪ শতাংশ প্রস্তাব করছি,” সংসদে বলেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে অর্থমন্ত্রী সাধারণ কারখানার জন্য শতকরা ১৫ ভাগ করের ব্যবস্থা রেখেছেন।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা লিডারশিপ ইন এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (লিড) সহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন’ করে থাকে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে চাপ থাকলেও দেশে গ্রিন কারখানা তৈরিতে সরকারের পক্ষে কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়া হয় না। তবে প্রথমবারের মতো এই কর ছাড় দিয়ে সরকার দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর সাবেক কান্ট্রি প্রধান ও পরিবেশবিদ ড. আইনুন নিশাত বেনারকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম পরিবেশ রক্ষার জন্য কর কমানো হচ্ছে; অর্থমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক।

তিনি বলেন, গ্রিন ফ্যাক্টরির জন্য শতকরা একভাগ কর কম আদায়ের এই ঘোষণা গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পের অনেককেই পরিবেশবান্ধব ফ্যাক্টরি স্থাপনে আগ্রহী করবে।

ড. নিশাত বলেন, গ্রিন বিল্ডিংয়ে কারখানার বর্জ্য পরিশোধিত করা হয়, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়, ব্যবহার করা পানি পুনঃচক্রায়ন করা হয়, সোলার বিদ্যুৎ ও দিনের আলো ব্যবহার করা হয়।

“গ্রিন ফ্যাক্টরি তৈরি করা কিছুটা ব্যয়বহুল, কিন্তু তৈরি করতে পারলে তা কয়েক বছরের মধ্যে লাভজনক হয়। যেমন, পাঁচ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা একটি কারখানাকে গ্রিন বিল্ডিং করা হলে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে তিন মেগাওয়াট,” ড. নিশাত বলেন।

“এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হবে, কার্বন নিঃসরণ কম হবে, খরচ কমে আসবে এবং সর্বোপরি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা কমে আসবে; এর ফলে পরিবেশ রক্ষা সহজ হবে।”

তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৮১ ভাগ আয় করে। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বেনারকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৭টি গ্রিন কারখানা চালু আছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আরো প্রায় ২৫০টি কারখানা পরিবেশবান্ধব গ্রিন হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, বিজিএমইএর ওয়েব সাইটের তথ্যমতে, বর্তমানে চার হাজার তিনশোটি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাদের সদস্য।

“আমার একটি কারখানা গ্রিন। গ্রিন কারখানা পরিবেশ দূষণ করে না। গ্রিন কারখানার জন্য একভাগ কর ছাড় কোনো বিরাট ব্যাপার নয়; তবে বিষয়টি ইতিবাচক,” বলেন রহমান।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে প্রশ্ন ওঠে যে আমাদের পণ্য গ্রিন কিনা। ভবিষ্যতে বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের গ্রিন কারখানায় যেতেই হবে।”

কর ছাড়ের পরিমাণ বেশি হলে আরো বেশি সংখ্যক মালিক গ্রিন কারখানা তৈরিতে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন রহমান।

স্থাপত্যবিদ সোহেল আহমেদ চৌধুরী কয়েকটি গ্রিন কারখানা ডিজাইন করেছেন। তিনি বেনারকে বলেন, একটি সাধারণ কারখানা তৈরির মোট প্রকল্প ব্যয়ের চাইতে শতকরা চার ভাগ বেশি খরচ হয় একটি গ্রিন কারখানা তৈরি করতে।

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় দেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানা অবস্থিত। এসব কারখানার অপরিশোধিত তরল রাসায়নিক ও রং আশপাশের কৃষি জমি, নদী-নালা, খাল-বিল ও আবাসিক এলাকা মারাত্মকভাবে দূষিত করে ফেলেছে।

“গার্মেন্টসের রং ও পচা পানি আমাদের জমি-জমা, বাসা-বাড়ি, গরু-ছাগল, মুরগি ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা বিষাক্ত পানি থেকে মুক্তি চাই,” বেনারকে বলেন সাভার শিল্প এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমাস।

প্রসঙ্গত, দেশে পোশাক শিল্প ছাড়া অন্য কোনো শিল্পক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রিন কারখানা গড়ে ওঠেনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।