এক চোখ হারাল মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.03.30
160330-BD-eyesight-620.jpg পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশু সুরাইয়া এক চোখে আর দেখবে না কখনোই। ৩০ মার্চ ২০১৬।
অনলাইন

পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বুলেটের আঘাত। আর সে আঘাতেই জন্মের কয়েক মাসের মাথায় একটি চোখ হারাল মাগুরায় মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ আলোচিত শিশু সুরাইয়া। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অন্য চোখটিরও।

গত বছর ২৩ জুলাই মাগুরার দোয়ারপাড়ায় ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা পারভীন। সেদিন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর মাগুরা সদর হাসপাতালে জন্ম দেন কন্যা সন্তানের। পেটের ভেতরে থাকা অবস্থাতেই শিশুটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বের হয়ে যায়।

জন্মের দুই দিন পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া মেয়ের নাম দেন সুরাইয়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বোর্ড গঠন প্রায় এক মাস ধরে সুস্থ করে তোলেন শিশু সুরাইয়া ও তার মাকে।

গুলির কারণেই চোখ নষ্ট

মঙ্গলবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা জানান, গুলির কারণে ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে শিশুটির। তবে অন্য চোখটি এখনো ভালো রয়েছে।

শিশু সুরাইয়ার মা নাজমা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, “সুরাইয়া ডান চোখে এখন কিছুই দেখতে পায় না। ডাক্তাররা বলেছেন, এই চোখে আর কখনোই দেখবে না সে।”

সোমবার মা-বাবার কোলে চড়ে শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতলে যায়। বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী সাব্বির আনোয়ারের পরামর্শ নেন তারা। পরে বুধবারই

সুরাইয়াকে নিয়ে মা–বাবা বাড়ি ফিরেছেন।

বাম চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

দৃষ্টি চলে যাওয়া ডান চোখের প্রভাবে বাম চোখটিও পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সুরাইয়ার চিকিৎসকেরা।

এ বিষয়ে ডা. সাব্বির আনোয়ার তাদের বলেন, “সুরাইয়া ডান চোখে আর কখনোই দেখবে না। প্রথম থেকেই শিশুটির চোখে দৃষ্টির জন্য যে আকৃতির দরকার তা ওর ছিল না। ওর চোখটির আকৃতি অনেক ছোট ছিল। লেন্সে ছানি ছিল। সেটি জায়গা থেকে সরেও গিয়েছিল। চোখটি এখনো সেই অবস্থাতেই রয়েছে।”

তবে ওর বাম চোখটি ভালো রয়েছে। খুব সাবধানে না থাকলে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই চোখে সুরাইয়া যাতে কোনো ভাবে আঘাত না পায়, সে বিষয়ে তার মা-বাবাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ।

এ বিষয়ে সাব্বির আনোয়ার বেনারকে বলেন, “কোনো ভাবে যাতে চোখটিকে অবহেলা না করা হয়, এ বিষয়ে সুরাইয়ার এখন মা বাবাকে সতর্ক করেছি। এটা নিয়ে যাতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন সে চেষ্টাও করতে হবে। এক চোখ দিয়েও পৃথিবী দেখা সম্ভব সেটা তাদের বোঝাতে হবে।”

সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, “আমার আট মাস বয়সী সুরাইয়ার খাওয়া, দাওয়া, ওজনসহ সবকিছু বেশ ঠিক আছে। শুধু ওর একটা চোখ ভালো নেই। ডাক্তার বলেছেন, ওই চোখে আর কখনো দেখতে পাবে না বাচ্চাটি। এ কথা শোনার পর থেকে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ শিশুটির চোখের আলো হারানোর জন্য মানবাধিকার কর্মীরা দায়ী করছেন দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতিকে। তারা বলছেন, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি শিশুটিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

“শিশু সুরাইয়ার চোখ হারানোর দায় এ দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি আর রাষ্ট্রের। তাই যাদের গুলিতে চোখের আলো হারাল সুরাইয়া, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি শিশুটিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে,” বেনারকে জানান মানবাধিকার কর্মী ও মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী।

 

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।