ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মায় পানি বাড়ছে বিপদজনক গতিতে
2016.08.26
অবশেষে বিহারের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গঙ্গা নদীতে তৈরি ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে বিপদজনক গতিতে পানি বাড়ছে বাংলাদেশের প্রমত্ত পদ্মায়।
ফারাক্কার পানি ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্লাবিত হয়েছে ৩০টির মতো গ্রাম। এ সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।
ফারাক্কার পানি ছেড়ে দেওয়ায় ইতিমধ্যে কয়েকবার বন্যা কবলিত হওয়া অঞ্চলগুলো আবারও প্লাবিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কার কথা জেনেও ফারাক্কার সবগুলো বাঁধ একসঙ্গে খুলে দিয়ে অবিবেচনাপ্রসূত কাজ করেছে ভারত।
বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।এ অঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষের বাড়ি-ঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, এবং ঝাড়খণ্ডেও বন্যা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফারাক্কা বাঁধের একশ গেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর থেকে বাংলাদেশের নদীগুলোতে পানি বাড়তে থাকে।এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য গ্রাম। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এ ধারা এভাবে অব্যাহত থাকলে শিগগির পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে।
প্রায় সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত
গঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধে ১০৮টি গেট রয়েছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন বেনারকে জানান, “নিজেদের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেটই খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে প্রতিদিনই পদ্মার পানির উচ্চতা প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
গঙ্গা নদীর উৎপত্তি হিমালয় থেকে। নদীটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় পদ্মা নাম ধারণ করেছে। সেখান থেকে ২৫৮ কিলোমিটার গিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে যমুনার সঙ্গে মিশেছে। সেখানে থেকে ১২০ কিলোমিটার এগিয়ে মেঘনার সঙ্গে মিলন হয়েছে চাঁদপুরে। দুই নদীর মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামেই বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।
গঙ্গার নদীর নাব্যতা বজায় রেখে কলকাতা বন্দরকে জাগিয়ে রাখতে উদ্দেশ্যে নদীটির ওপর নির্মিত হয় ফারাক্কা বাঁধ। শুষ্ক মৌসুমে এ বাঁধ খুলে না দেওয়ায় বাংলাদেশ পানি স্বল্পতায় ভুগলেও বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি সরাতে বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে দুর্দশায় পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের অসংখ্য গ্রামের মানুষ।
পাউবো সূত্রে জানায় যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৩১ মিটার, যা বিপদ সীমা থেকে ১৯ সেন্টিমিটার কম। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকেও সেখানকার পানির এই উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ২৮ মিটার। অর্থাৎ রাজশাহীতে ৯ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার।
“এভাবে পানি বাড়তে থাকলে শনিবার রাতে তা বিপদ সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে,” জানান মীর মোশাররফ হোসেন।
এদিকে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় কুষ্টিয়ায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় বিপদ সীমার মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে যাচ্ছে পানি। তবে প্রতি তিন ঘণ্টায় পদ্মায় ২ সেন্টিমিটার করে বাড়ায় একদিনের মধ্যেই পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে এখানকার দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পুরো বন্যা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজিব উল ফেরদৌস বেনারকে জানান, “পানিবন্দী কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে।”
বাংলাদেশের উচিত প্রতিবাদ জানানো
ভারতের এ আচরণের বিরুদ্ধে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন বাংলাদেশের উচিত এখনই প্রতিবাদ জানানো।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বেনারকে বলেন, “ভারত শক্তিশালী দেশ হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। ফলে এটা বাংলাদেশের ওপর রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োগ।”
তিনি বলেন, “ফারাক্কা বাঁধ মূলত বাংলাদেশের জন্য একটা ফাঁদ। এ বাঁধের কারণেই শুষ্ক মৌসুমে আমাদের বিভিন্ন অঞ্চল প্রায় মরুভূমি হয়ে যায়, আবার ভরা মৌসুমে সব ভেসে যায়।”
এই গবেষক বলেন, “সম্প্রতি এমনিতেই দেশে কয়েকদফা বন্যা হয়ে গেছে। মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবার ভারতের পানি আসা শুরু হয়েছে। এতে করে গরিব অসহায় মানুষগুলো পানিবাহিত নানা অসুখে পড়ছে। বাধার মুখে পড়ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। তাই ভারতকেও মানবিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।”