আবারও ফতোয়া, গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

প্রাপ্তি রহমান
2017.12.29
ঢাকা
ফতোয়ার বিরুদ্ধে সরকারি উদ্যোগ নেবার দাবীতে নারী অধিকার কর্মীদের বিক্ষোভের ফাইল ছবি।  জুলাই ২৭, ২০০৯ ফতোয়ার বিরুদ্ধে সরকারি উদ্যোগ নেবার দাবীতে নারী অধিকার কর্মীদের বিক্ষোভের ফাইল ছবি। জুলাই ২৭, ২০০৯
এপি

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দোররা মেরে মৌসুমী আকতার নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে ওই গৃহবধূর বিরুদ্ধে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। এরপর গ্রাম্য সালিসে তাঁকে দোররা মারার হুকুম হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে।

গত ২১ ডিসেম্বর নির্যাতনের শিকার মৌসুমীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় সালিশে উপস্থিত কাজীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ফতোয়া দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া অবৈধ।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নয় মাস আগে মৌসুমীর সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মৌসুমির সঙ্গে দেবরের বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করতে শুরু করেন জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবারের লোকজন । ১৪ ডিসেম্বর ওই গ্রামে সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সাত দিন পর শ্বশুরবাড়ি থেকে মৌসুমীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

এই মৃত্যু নিয়ে তিন ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটি পক্ষ বলছে, পরকীয়ার ঘটনা ঘটেনি। যৌতুকের জন্য পরকীয়াকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়েছে। আরেক পক্ষের মত হলো, সালিশ বৈঠকে অপমানিত হয়ে মৌসুমী আত্মহত্যা করেছে। আরেকটি পক্ষ বলছে, মৌসুমীকে দোররা মারার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করে।

তবে তিনটি পক্ষই গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়েছিল বলে জানায়।

এই ঘটনায় হরিপুর থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে। তবে মৌসুমীর পরিবার ও নারী অধিকারকর্মীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ বিষয়ে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, মৌসুমিকে হত্যা করা হয়নি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাই আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা নেওয়া হয়েছে। তাতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং সালিশ বৈঠকের কাজীকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তবে সালিশে মৌসুমীকে দোররা মারার ঘটনা ঘটেছিল কি না, সে সম্পর্কে রুহুল কুদ্দুস নিশ্চিত নন বলে জানান।

তাহলে কাজীকে কেন গ্রেপ্তার করেছেন? এমন প্রশ্নে রুহুল কুদ্দুস বলেন, তদন্তের এক পর্যায়ে তাঁরা সালিশের বিষয়টি জানতে পারেন। সে কারণে কাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন নিহতের ভগ্নিপতি মো. আবেদ আলী ।

শুক্রবার রাতে তিনি বেনারকে জানান, “গত ১৪ ডিসেম্বর যৌতুকের দাবিতে মৌসুমীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় তার স্বামী। এরপর ২০ ডিসেম্বর সকালে বাপের বাড়ি থেকে তাকে শ্বশুরবাড়ি নেওয়া হয়। এরপর মৌসুমীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয় তার স্বামীসহ অন্যরা । একইদিন রাত দশটার দিকে গ্রাম্য সালিসে তাঁকে দোররা মারা হয় ”

এক প্রশ্নের জবাবে আবেদ আলী বলেন, দোররা মারার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে আত্মীয়–স্বজনের মুখে শুনেছেন।

পেশায় ইজি বাইকের চালক আবেদ আলী জানান,  তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগম থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। লোকমুখে জানতে পেরেছে, মৌসুমীর চাচা আব্দুল হাই আরেকটি অভিেযাগ দিয়েছেন। সেটি আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হিসেবে থানা গ্রহণ করেছে ।

ফতোয়ার নামে শাস্তি আরোপ নিষিদ্ধ

২০১৫ সালে আদালত শর্তসাপেক্ষে ফতোয়া বৈধ বলে রায় দেন। তাতে বলা হয়েছে, ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা নষ্ট হয়, এমন ফতোয়া দেওয়া যাবে না। ফতোয়ার নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না এবং ধর্মীয় বিষয়ে শুধু বিজ্ঞ ব্যক্তিরা মতামত তুলে ধরতে পারবেন।

মৌসুমীর মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ ‌মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বেগম বলেন, "গ্রাম্য সালিশে ফতোয়া দিয়ে বিচার করা বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনায় পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। আমরা জানতে পারছি, পুলিশ এই ঘটনায় হত্যা মামলা নেয়নি, অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।"

মালেকা বেগম আরও বলেন, এ বিষয় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি দেবেন এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে জানাবেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।