শুরু হয়েছে বিভিন্ন ভবনে অননুমোদিত হোটেল-রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান

কামরান রেজা চৌধুরী
2024.03.04
ঢাকা
শুরু হয়েছে বিভিন্ন ভবনে অননুমোদিত হোটেল-রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান ঢাকায় ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত একটি খাবাররে দোকান ভেঙ্গে দেয়া হয় রাজউকের অভিযানে। ৪ মার্চ ২০২৪।
[সাবরিনা ইয়াসমীন/ বেনারনিউজ]

ঢাকার বেইলি রোডে  বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ ব্যক্তির প্রাণহানির পর পুলিশ এবং নগর কর্তৃপক্ষ ঢাকায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

রোববার রাতে পুলিশ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৯ হোটেল কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে। অবশ্য সোমবার দুপুরের পর থেকে আরো জোরেশোরে অভিযান শুরু করে দমকল বাহিনী ও রাজউক।

ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র ফারুক হোসেন সোমবার বেনারকে জানান, রোববার থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ২১৫টি মামলা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে ৩৮১ জনকে।

এদিকে রাউজক দল নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে বলে সোমবার অনুষ্ঠিত নগর উন্নয়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

‘লোক দেখানো অভিযান চলবে না’

সভায় উপস্থিত স্থপতি ইকবাল হাবিব সোমবার বেনারকে বলেন, “আমরা বলেছি, কোনও ঘটনা ঘটার পর হই চই হবে।  এরপর সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে, সেটি চলবে না।  অনতিবিলম্বে ঢাকা মহানগরীর সকল অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।  কোনও রকম লোক দেখানো অভিযান চলবে না।”

ঢাকা শহরের পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।  জনসংখ্যা অনুসারে মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান না থাকায় ঢাকাবাসীর একটি বিরাট অংশ বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও কফির দোকানে বসে গল্প করেন, সময় কাটান এবং অনেক সময় অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ ও সভা সেরে নেন।

ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত যুবক-যুবতীদের আধিক্য দেখা যায়। 

খাবার ব্যবসা বেশি লাভজনক হওয়ায় এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে দিন দিন।  গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, মিরপুর-১২ থেকে শুরু করে সকল স্থানেই রয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ এবং নামিদামী খাবার দোকান।  এমনকি একই ভবনে দেখা যায় অনেকগুলো দোকান।

যেমন ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের ১৩ তলা ইম্পেরিয়াল আমিন আহমেদ সেন্টারে ১৯টি রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড রয়েছে।  এই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে একাধিক রেস্টুরেন্ট।  সেখানে নেই জরুরি নির্গমন পথ।  এমনকি প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও নেই ভবনটিতে।  ভবনটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

একই এলাকায় গাউসিয়া টুইন পেক নামের ভবনে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ২০।  ভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। কিন্তু সেখানে দৈনিক শত শত মানুষ আসছেন, খাচ্ছেন ও আড্ডা দিচ্ছেন।  অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে কারও খুব একটা চিন্তা নেই।

 

7b113ff8-3564-46d0-b438-52ad5a607db5.jpg
ঢাকার ধানমন্ডি রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম। পরে কেয়ারী ক্রিসেন্ট টাওয়ারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।০৪ মার্চ ২০২৪। [সনি রামানী/বেনারনিউজ]

ঢাকা মহানগরের ৮৮ শতাংশ ভবন অবৈধ 

সোমবার রাজউকের নগর উন্নয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাজউক, দমকল বাহিনী এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সকল সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।  এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পানাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আজকে নগর উন্নয়ন কমিটির সভায় খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।  প্রথম সিদ্ধান্ত হলো, ঢাকা মহানগরের যে ৮৮ শতাংশ ভবন অবৈধ রয়েছে সেগুলোকে গার্মেন্টস শিল্পের মতো করে নিয়মের মধ্যে আনার ব্যবস্থা করা হবে।”

তিনি বলেন, সব অবৈধ ভবনগুলোকে বৈধ কাঠামোর মধ্যে আনতে জরিমানাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  এছাড়া, কেউ যদি এ ব্যাপারে সহায়তা না করেন, তবে তাদের বাধ্য করা হবে।

আশরাফুল আলম বলেন, যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোকে চিহ্নিত করে ভবনের সামনে নোটিশ টানানো হবে, যাতে জনগণ সচেতন হয়।

তিনি বলেন, “সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাজউক কোনও ভবনকে যে শ্রেণিতে ডিজাইন পাশ করবে সিটি কর্পোরশেন সেই শ্রেণিতেই ট্রেড লাইসেন্স দেবে।  ধরা যাক, রাজউক কোনও ভবনকে আবাসিক হিসাবে অনুমোদন দিয়েছে।  সেখানে সিটি কর্পোরেশন যদি এর বিপরীতে বাণিজ্যিক ভবন হিসাবে ট্রেড লাইসেন্স দেয়, সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আইনগত ভিত্তি আসে।”

তিনি বলেন, “অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আর্থিক দণ্ড প্রদান করা হবে, প্রয়োজনে সিলগালা করে দেয়া হবে।”

তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষেরা মনে করেন, বড় কোন অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারি সংস্থাগুলো লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে চায়। তাদের এই অভিযানে দোষী ব্যক্তি ছাড়াও অনেক নিরীহ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতির শিকার হবেন।

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি

এদিকে নির্বাহী বিভাগের পাশাপাশি এবার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

জনস্বার্থে আইনজীবী ইউনূছ আলী আকন্দ ও ইশরাত জাহানের পৃথক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত দেন বলে রিটকারী আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান।

হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিবকে।  কমিটিতে পুলিশ, দমকল বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আহম্মদ ফয়েজ ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।