পার্বত্য দুর্গম এলাকা সাজেকে চরম খাদ্য সংকট
2017.05.15
ঢাকা

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সাজেক উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার আদিবাসী এক মাসের বেশি সময় ধরে চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন। সেখানে যাওয়ার জন্য সড়ক, নৌ বা রেলপথ নেই। নিকটবর্তী রাস্তা থেকে পায়ে হেঁটে সাজেকে যেতে সময় লাগে প্রায় দু’দিন।
আদিবাসী নেতারা বলছেন, এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে শুরু হওয়া এই খাদ্য সংকট আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তাঁদের মতে, অবিলম্বে খাদ্যশস্য পৌঁছানো না গেলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুর্গম পাহাড়ি উপজেলা সাজেক। সেখানে খাদ্যশস্য পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
এখানকার আদিবাসী ত্রিপুরা, চাকমা ও লুসাই সম্প্রদায় জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য নিজেরাই উৎপাদন করেন। উৎপাদন কম হলে তারা খাদ্য সংকটে পড়েন।
“সাজেক উপজেলার আদিবাসীরা জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল। রাস্তা-ঘাট না থাকায় এখানকার মানুষেরা বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে না। কোনো বছর উৎপাদন কম হলে আমরা বিপদে পড়ে যাই; অনাহারে থাকতে হয়,” সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বেনার নিউজকে বলেন।
তিনি বলেন, গত বছর সাজেকে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে। এর কারণ, মাটির উর্বরতা কমে যাওয়া।
নেলসন চাকমা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পরিবারকে ২০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সাহায্য যথেষ্ট নয়। আবার খাদ্যশস্য এখানে পরিবহন করাও খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ খাদ্যশস্য বস্তা মাথায় বা ঘাড়ে তুলে বহন করে আনতে হয়।
সাজেক উপজেলার খাদ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন সাধন চাকমা। তিনি বেনার নিউজকে বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে বন্যার কারণে সাজেক উপজেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এরপর ২০১৩ সালে আরেক দফা খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
তিনি বলেন, গত বছর সাজেকে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে তা দিয়ে এখানকার মানুষ ৭ মাস পর্যন্ত চলতে পেরেছে। এই খাদ্য সংকট আগস্ট পর্যন্ত চলবে, যদি না সরকার জরুরি ভিত্তিতে সেখানে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বেনারকে বলেন, “আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৮ মে. টন চাল ও সাড়ে চার লাখ টাকা বিতরণ করেছি। এই সাহায্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু যে সমস্যা আমরা দেখছি তা হলো সেখানে রাস্তা-ঘাট নেই। নিকটতম রাস্তা থেকে সাজেক যেতে প্রায় দু’দিন লেগে যায়।”
“আমি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী ১৭-১৮ মে হেলিকপ্টারে করে খাদ্যশস্য পৌঁছানোর চিন্তা ভাবনা চলছে। কিন্তু হেলিকপ্টারে খাদ্য বহন খুবই ব্যয়বহুল,” বলেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, সাজেকের অধিবাসীরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করত, খাদ্য কিনত। কিন্তু গত বছর ভারত কাঁটাতার দিয়ে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সাজেকের জনগণের আয় এবং যোগাযোগ— দুই বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, সাজেকের অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক ও বেসরকারি সংস্থা সোসাইটি ফর ইনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট এর প্রধান ফিলিপ গায়েন বেনারকে বলেন, সাজেকের অধিবাসীরা তাদের উৎপাদিত খাবার হিসেব করে খরচ করে। সেখানে টাকা থাকলেও খাবার মেলে না।
“সাজেকে খাদ্য সংকটের অন্যতম কারণ হলো জুমচাষের জায়গা দখল করে নিয়েছে তামাক চাষ। চাষিরা বেশি লাভের আশায় তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। আরও সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাবার চাষ। সুতরাং খাদ্য সংকট হওয়াটাই স্বাভাবিক,” ফিলিপ বলেন।
তাঁর মতে, সরকারের উচিত নিকটতম স্থানে খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে খাদ্য মজুত রাখা, যাতে খাদ্য সংকট দেখা দিলে সেখান থেকে আদিবাসীরা খাদ্য কিনতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানের মতো স্বল্প মূল্যে খাদ্যশস্য বিক্রির ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে।