প্রধানমন্ত্রীর ‘মানহানি’ মামলায় ফুটবল কর্মকর্তার জামিন

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.03.19
ঢাকা
190319_Kiron_bail_1000.jpg বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনিবার্হী সদস্য ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ছবিটি বাফুফের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ক্রীড়া সংগঠক মাহফুজা আক্তার কিরণকে জামিন দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

“মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তাঁর জামিনের আদেশ দিয়ে আগামী ২ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। এ সময় পর্যন্ত তিনি মুক্ত থাকবেন,” বেনারকে বলেন কিরণের আইনজীবী লিয়াকত হোসেন।

তিনি বলেন “আমরা আদালতে কিরণের অসুস্থতা সংক্রান্ত মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল করেছি। তিনি ক্যানসারের রোগী এবং একজন নারী। এই দুটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন।”

গত শনিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনিবার্হী সদস্য ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) কিরণের গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার বিবৃতি দিয়েছিল। কিরণ এই উভয় সংগঠনেরই সক্রিয় সদস্য। একই দিন তাঁর গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও।

গ্রেপ্তারের কারণ

গত ৮ মার্চ বাফুফের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কিরণ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সব খেলাই তাঁর কাছে সমান। তিনি কেন ফুটবলকে অন্য চোখে দেখবেন। মেয়েরা ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন। গিফট তো পরের কথা। অভিনন্দন তো দিতে পারে। মিডিয়াতে কি কোনো অভিনন্দন তিনি জানিয়েছেন?”

তিনি বলেছিলেন, “বাফুফের টাকা কেন প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে দেয়া হবে? বিসিবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনেক স্বার্থ আছে। বিসিবি সরকারের অনেক ফ্যাসিলিটিজ নেয়। পান থেকে চুন খসলেই ক্রিকেটাররা প্লট পেয়ে যায়, গাড়ি পেয়ে যায়। ফুটবল ফেডারেশন সরকারের কাছে থেকে কোনো ফ্যাসিলিটিজ নেয় না।”

কিরণের ওই বক্তব্য ৯ মার্চ রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন প্রকাশ করে। বিভিন্ন দৈনিকেও প্রকাশিত হয়। কিরণের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে দাবি করে গত ১২ মার্চ শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের স্থায়ী সদস্য আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স বাদী হয়ে কিরণের বিরুদ্ধে পঞ্চাশ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় গত ১৬ মার্চ (শনিবার) মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান নোমান কিরণের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার অল্প সময় পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

“কিরণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমার মক্কেল বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। এই মামলায় তিনি দণ্ডিত হলে তাঁকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত জেল খাটতে হবে,” বেনারকে বলেন বাদিপক্ষের আইনজীবী রেফায়েতুল করিম।

কিরণ বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন। আদালত থেকে জামিনের কাগজ পৌঁছালে বুধবার তিনি মুক্তি পাবেন বলে আশা করেছেন তাঁর আইনজীবী লিয়াকত।

অ্যামনেস্টির বিবৃতি

সোমবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি এক বিবৃতিতে কিরণের মুক্তি চান।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “মাহফুজা আক্তার কিরণ তাঁর বাক-স্বাধীনতা ব্যবহার করে শুধু বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটকে বেশি পছন্দ করেন। ফুটবলকে এগিয়ে রাখা কোনোভাবেই অপরাধ হতে পারে না। মানহানির মামলায় জড়িত করা এত ঠুনকো বিষয় হলে তা নিছক হাস্যকর হয়ে যায়।”

উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি বলেছে, “সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে আপত্তিকর বক্তব্যের অভিযোগে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার হওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে একই ধরনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে একশ দিনেরও বেশি সময় কারাগারে রেখেছিল সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছিল।”

অ্যামনেস্টি বলেছে, “যেসব কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকারের দমন নীতি। যত দিন পর্যন্ত এ ধরনের গ্রেপ্তার এবং নিপিড়নমূলক আইনগুলো বহাল থাকবে তত দিন বাংলাদেশ মানবাধিকার সমুন্নতকারী উদীয়মান অর্থনীতির দেশে হিসেবে মর্যাদা পাবে না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।