রানা প্লাজা ধসের মূল মামলাগুলোর রায় দ্রুত ঘোষণার দাবি

জেসমিন পাপড়ি
2018.03.30
ঢাকা
সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একজন শ্রমিককে বের করে নিয়ে আসছেন উদ্ধারকর্মীরা। সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একজন শ্রমিককে বের করে নিয়ে আসছেন উদ্ধারকর্মীরা। ২৪ এপ্রিল ২০১৩।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মূল মামলার রায় দ্রুত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। দুর্নীতির দায়ে ভবনটির মালিক সোহেল রানার মা মর্জিনা বগমের সাজা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার তাঁরা এই দাবি জানান।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের হওয়া একাধিক মামলার বিচার চলমান থাকার মধ্যে বৃহস্পতিবার মর্জিনা বেগমকে (৬০) ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

তবে শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মূল মামলার বিচারকাজকে দৃষ্টির আড়াল করতেই এসব মামলার রায় দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বেনারকে বলেন, “রানার মায়ের বিরুদ্ধে কবে মামলা হলো, সেটাই তো জানি না। অপরাধ থাকলে তাঁর বিচার হতেই পারে। কিন্তু মূল যে ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, সেই রানা প্লাজা ধসের বিচার হচ্ছে না।”

তাঁর অভিমত, আগে মূল মামলার বিচার প্রক্রিয়া শে​ষ হওয়া উচিত। এরপর খুচরা মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হতে পারে।

“মনে রাখা উচিত বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনার বিচার না হলে পুরো পৃথিবীর চোখে অপরাধী হয়ে থাকব আমরা। তাই যত দ্রুত সম্ভব সহস্রাধিক শ্রমিক হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করে দোষীদের সাজা কার্যকর করতে হবে,” বলেন ওয়াজেদুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে আট তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়ে। এতে ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কর্মরত এক হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও সহস্রাধিক শ্রমিক।

রানা প্লাজা ধসের পর ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এর পরপরই বিভিন্ন অভিযোগে রানার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। পাশাপাশি দুদকও তাঁর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে-বেনামে অর্জিত সম্পদের উৎস খোঁজা শুরু করে।

ওই ধসের ঘটনার হত্যা মামলা, অস্ত্র মামলা ও ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

দুর্নীতির দায়ে সাজা

মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ।

এই রায়ে জ্ঞাত আয়ের বাইরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাঁকে তিন বছর এবং সম্পদের তথ্য গোপন করায় আরও তিন বছর জেল দেওয়া হয়।

জেল ছাড়াও মর্জিনা বেগমকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সাভার বাজার রোডে মর্জিনা বেগমের নামে থাকা একটি পাঁচ তলা বাড়ির এক তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

গত বছরের ২৯ আগস্ট একই আদালত দুদকের তলবে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকেও তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। সোহেল রানা এখন জেলে।

দুদকের আইনজীবী সালাউদ্দিন এস্কান্দার বেনারকে জানান, রানার মা মর্জিনা বেগম জামিনে ছিলেন। তবে রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সাজা ঘোষণার পর আদালত জামিন বাতিল করে মর্জিনা বেগমকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

এই মামলার নথি অনুযায়ী, দুদকের নোটিসের প্রেক্ষিতে মর্জিনা ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর তার সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। তিনি সেখানে চার কোটি ৮২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬৮ টাকার স্থাবর এবং ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখান।

এই হিসাব অনুযায়ী, ধসে পড়া রানা প্লাজার ৪০ শতাংশের মালিক তিনি। এ ছাড়া সাভার বাজার রোডে চার শতক জমির উপর একটি পাঁচ তলা বাড়ির এক তৃতীয়াংশ, অন্য একটি খতিয়ানে ৪১ শতক জমির ৪০ শতাংশ, সাভার বাজার রোডের আরও একটি পাঁচ তলা ভবনের এক তৃতীয়াংশের মালিক তিনি।

তদন্ত শেষে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে একটি বাড়ির নির্মাণ ব্যায়ের ৪২ লাখ ২০ হাজার ৪৪৮ টাকা এবং রানা প্লাজা নির্মাণে ছয় কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পায়।

২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল রমনা থানায় মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। প্রায় তিন বছরের মাথায় মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।