বকেয়া চেয়ে তিন কারখানার পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
2021.07.08
ঢাকা

বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনার দাবিতে ঢাকার আশপাশের কয়েকটি মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তিনটি পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক।
অবরোধের কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউনের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক ব্যবহার করা পণ্যবাহি ও ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জে ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের শ্রমিকেরা ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। ফলে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পণ্যবাহী যানবাহনের জট লেগে যায়।
ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপের বিক্ষোভরত শ্রমিক রিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, “গত চার মাস ধরে আমাদের বেতন ও সকল প্রকার ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখন তো কারখানাই বন্ধ হয়ে আছে। মালিকপক্ষ কয়েক দফা বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আজও বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ আসেনি।”
“এর বদলে নোটিশ টানিয়ে বেতন দেওয়ার নতুন তারিখ জানিয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা এখন দায় হয়ে পড়েছে। বেতন–ভাতা দেওয়া না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাব,” বলেন তিনি।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে ওই কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক মহাসড়ক অবরোধ করে। কয়েক ঘণ্টা পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে ওপেক্স অ্যাণ্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ কর্তৃপক্ষ কথা বলতে রাজি হননি। তবে কারখানায় টানানো নোটিশে দুঃখ প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ আগামী ১২ জুলাই মে মাসের এবং আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে ঈদুল আজহার বোনাস ও জুন মাসের মজুরি বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আশির দশকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ এই পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক ঋণের দায়, অ্যাকর্ড-এলায়েন্সের নিরাপত্তা সনদ ইস্যু এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বকেয়াসহ বিভিন্ন কারণে সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সহসভাপতি ফজলুল হক বেনারকে বলেন, “করোনাকালে প্রথম তিন থেকে ছয় মাস আমাদের পোশাক খাত কিছুটা কঠিন সময় পার করলেও এখন পরিস্থিতি তেমন খারাপ না। তবে ওপেক্স এন্ড সিনহার কারখানা অনেক আগেই রুগ্ন হয়ে গেছে। ফলে তাদের কিছু সমস্যা চলছে।”
“মাঝে মধ্যেই তারা গ্যাস–বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় কর্তৃপক্ষ লাইন কেটে দেয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা আছে। তবে শ্রমিকেরা যেহেতু কাজ করেছে, তাদের বকেয়া দিতে হবে। এটা তাদের অধিকার। আমরা এ বিষয়ে কারখানাটির মালিকপক্ষের সাথে আলাপ করবো,” বলেন তিনি।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০০ কোটি টাকা বকেয়া আদায় করতে না পেরে গত ৭ জুন ওই কারখানার গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। তবে মালিকপক্ষ কিস্তিতে বকেয়া বিল পরিশোধের অঙ্গীকার করলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ২ জুলাই সংযোগ দেওয়া হয় বলে সাংবাদিকদের জানান তিতাসের সোনারগাঁও জোনের ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন।
এদিকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর বেনারকে বলেন, “সকালে প্রায় দেড় থকে দুই ঘণ্টা ধরে স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড নামে একটি কারখানার কয়েকশ কর্মী বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে।”
“পরে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি আলোচনার জন্য আসলে আন্দোলনরত কর্মীরা রাস্তা ছেড়ে যান,” বলেন তিনি।
আন্দোলনত শ্রমিকদের একজন মুজিবুর রহমান বেনারকে জানান, তিন–চার মাস ধরে তারা বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া পাচ্ছেন না। ফলে এই লক ডাউনের মধ্যে মানবেতন জীবন যাপন করছেন।
শ্রমিকেরা জানান, পোশাক কারখানাটিতে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের ৮ মাসের বেতন ও হাজিরা বকেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই শ্রমিকরা বেতন ও বকেয়ার জন্য আন্দোলন করে থাকে।
একাধিক শ্রমিক জানান, মে মাসে আন্দোলন করা হলে কারখানার মালিকপক্ষ গত ১৪ জুন বেতন দেওয়ার কথা বলেন। এরপর কয়েক দফা তারিখ বদলানোর পর এখন পর্যন্ত বেতন পাননি কর্মীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে কারখানা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। গাজীপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
তবে এ বিষয়ে দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বেনারকে বলেন, “কিছু শ্রমিকের দুই–এক মাসের বেতন ভাতা বকেয়া রয়েছে। তারাই আন্দোলন করেছে। তবে মালিকপক্ষ জানিয়েছে ঈদের আগেই বকেয়া পরিশোধ করে দেবে।”
তিনি বলেন, “করোনা মহামারীর কারণে শুরুর দিকে বাংলাদেশের পোশাক খাত ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এখন আমরা ভাল আছি। বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার পাচ্ছি। যার সুফল আরো কয়েকমাস পর থেকে পাওয়া শুরু হবে। এমন অবস্থায় কর্মীদের বেতন–ভাতা বকেয়া থাকার কথা নয়।”
করোনা মহামারীর সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলা কঠোর লক ডাউনে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকলেও পোশাক কারখানা চালু রয়েছে।
বিজিএমইএ বলছে, মহামারীর শুরু দিকে পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হলেও পরবর্তিতে তা ফিরতে শুরু করে। এমনকি রানা প্লাজার পরে মুখ ফিরেয়ে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়ার্ল্ড ডিজনিও আট বছর পর আবার তাদের পোশাক কেনার উৎস হিসেবে বাংলাদেশে ফিরছে।
বিজিএমইএর তথ্য মতে, করোনার কারণে গত বছর প্রায় ৩.৮১ বিলিয়ন ডলারের রফতানি কার্যাদেশ স্থগিত হয়। পরে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিরে এসেছে।