সম্পদের হিসাব না দেওয়ায় রানা প্লাজার মালিকের ৩ বছর জেল

জেসমিন পাপড়ি
2017.08.29
ঢাকা
রায়ের পর আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে রানা। রায়ের পর আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পথে রানা। আগস্ট ২৯, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

সাভারের ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় আদালত তাকে এই শাস্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ মঙ্গলবার এ রায় দেন। এ সময় রানা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অবৈধ অস্ত্র, ইমারত বিধি, ভবনের নকশা ও জালিয়াতির অভিযোগে আরও পাঁচটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় তিনি কারাগারে রয়েছেন।

চার বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ মে বাংলাদেশের সাভারে রানা প্লাজা নামক একটি বহুতল ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।

সরকারি হিসেবে, ওই ঘটনায় আহত ও পঙ্গু হন ১ হাজার ১৬৭ জন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। এদের অনেকে এখনো দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। ওই ঘটনার পর ১০৩ শ্রমিকের লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনো প্রতীক্ষায় তাঁদের স্বজনেরা। বেওয়ারিশ হিসেবে তাঁদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে।

রানা প্লাজা ধসের পর পালিয়ে যান সোহেল রানা। ঘটনার পাঁচ দিন পর ২৯ এপ্রিল বেনাপোলে র‍্যাবের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন।

তবে দীর্ঘ সময় পরেও মূল মামলার বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বেনারকে বলেন, “চারটা বছর পেরিয়ে গেছে অথচ মূল মামলার বিচার এখনো হয়নি। এতগুলো মানুষ মারা গেল অথচ কারও যেন কোনো বিকারই নেই এ বিষয়ে।

“দুদকের এই মামলার রায় তো আর মূল ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয়। এখানে তাই আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। মূল ঘটনার বিচারে সবাইকে আরও সোচ্চার হতে হবে,” বলেন তিনি।

জলি তালুকদারের অভিযোগ, “একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করতে ১৮ টি প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিতে হয়। ভবনটি ধসের জন্য সেসব প্রতিষ্ঠানও সমানভাবে দায়ী। অথচ তাদের প্রথম থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

মামলার নথি অনুযায়ী রানা প্লাজার কর্ণধার সোহেল রানা, তাঁর স্ত্রী এবং ও তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের স্বনামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও দায়দেনার উৎস এবং তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী চেয়ে ২০১৩ সালের ২২ মে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ইস্যু করে দুদক।

২০১৫ সালের ১ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপারের মাধ্যমে রানার নামের সম্পদ বিবরণী নোটিশ পাঠানো হয়। ২ এপ্রিল রানা সম্পদ বিবরণী নোটিশ গ্রহণ করেন। ২৬ এপ্রিল তা পূরণ না করেই দুদকে পাঠান। ওই বছরের ২০ মে সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে।

২০১৬ সালের ১ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২ (২) ধারায় এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। গত ২৩ মার্চ সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। দুদকের পক্ষে এ মামলায় আটজন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়।

রায়ের বিষয়ে বাদীর আইনজীবী ফারুক আহম্মদ বেনারকে বলেন, “দুদক তাদের নোটিশে সাত দিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলেছিল। সোহেল রানা উত্তর দেওয়ার জন্য আইনজীবী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সে অনুমতি দেয়নি। তা ছাড়া রানা প্লাজা ধসে পড়ায় অনেক নথিপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। রানা বলেছিলেন জামিনে ছাড়া পেলে তিনি এর উত্তর দেবেন। কিন্তু দুদক কোনো যুক্তিই মানেনি।”

ফারুক আহম্মদ বলেন, “সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর একবার জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা হয়েছিল। জেল হাজতে থাকাকালীন সময়ে কারও কাছে দুদক সম্পত্তির বিবরণ চাইতে পারবে না মর্মে হাইকোর্ট তখন রুল জারি করেছিল।”

এই আইনজীবীর বিশ্বাস, উচ্চ আদালত সোহেল রানার এই সাজাও স্থগিত করে দেবেন।

তবে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দুদকের আইনজীবী এম এ সালাউদ্দিন ইস্কান্দার বেনারকে বলেন, “আদালত সঠিক রায় দিয়েছেন।”

বাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে গেলে সেখানে তাঁদের মোকাবিলা করা হবে বলে জানান এই আইনজীবী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।