৪৬ বছর পর গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পেল ২৫ মার্চ

জেসমিন পাপড়ি
2017.03.23
ঢাকা
শিল্পী নাজমুল কাশেম এর চিত্রকর্ম ‘২৫ মার্চ ১৯৭১’। শিল্পী নাজমুল কাশেম এর শিল্পকর্ম ‘২৫ মার্চ ১৯৭১’। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০২।
AFP

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে প্রথমবার ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে কূটনৈতিক তৎপরতাও শুরু করেছে সরকার। দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস পালনে জাতিসংঘে প্রস্তাবও দেবে বাংলাদেশ।

গত ১১ মার্চ জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রস্তাব তুললে প্রায় সাত ঘণ্টা আলোচনার পর প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। পরে ২০ মার্চ দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে মন্ত্রিসভা।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা থেকেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

প্রথমবার দিবসটি পালনে দেশজুড়ে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। এ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, “এবার সময় কম থাকায় ব্যাপকভাবে দিবসটি পালন করা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এই ঘটনা মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

তবে দিবসটি যথাযথভাবে পালনের আহবান জানিয়েছেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ কন্যা শাওন মাহমুদ।

তিনি বেনারকে বলেন, “২৫ শে মার্চ কালরাত্রি শোকের দিন। একাত্তরে এই দিনটিতে গণহত্যা শুরু হয়েছিল। জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে শোকাবহ পরিবেশে দিনটিতে শহীদদের স্মরণ করতে হবে। এই দিনটি উদযাপনের নয়।”

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু

জাতীয় দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি ২৫ মার্চ এর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। তবে গণহত্যা বিষয়ক জাতিসংঘের আরেকটি দিবস থাকায় এ স্বীকৃতি পাওয়া জটিল হতে পারে। এক্ষেত্রে দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেয়ে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেওয়া রাষ্ট্রগুলোর কাছে সমর্থন চাইবে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “ইতিমধ্যে ২০১৫ সালে ৯ ডিসেম্বর গণহত্যা সনদ গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। এ জন্য ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হবে না। তবে এটা যে গণহত্যা ছিল তার স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব হবে।”

“এ জন্য মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সকল রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জাতীয় সংসদ বা আইনসভাগুলো আমদের পাশে ছিল, প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কাছেই এই স্বীকৃতির জন্য যাব। আশা করি সবার আগে তারাই এই স্বীকৃতি দেবে। পরে বাকি দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করা হবে,” বলেন তিনি।

ঘটনাটি ৪৫-৪৬ বছর আগের হওয়ায় চ্যালেঞ্জটা বেশি জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন দেশে এখন যারা রাষ্ট্রনেতা বা আইন প্রণেতা আছেন, বিষয়টি তাঁদের নতুন করে জানাতে হবে। এর জন্য আমাদের কিছু ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং দরকার। সেভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে জাতিসংঘে ও জেনেভায় অবস্থিত মানবাধিকার পরিষদের স্বীকৃতি আদায়ে করণীয় নির্ধারণ করতে কয়েকজন কূটনীতিককে সেখানে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে সরকার। এ ছাড়া আগামী ২৫ মার্চকে সামনে রেখে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে গণহত্যাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি রাষ্ট্রকে আমাদের আলাদাভাবে রাজি করিয়ে স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। সে জন্য এটি সময়সাপেক্ষ, কঠিন, নতুন এবং গতানুগতিক কূটনীতির বাইরের একটি কাজ। তবে অসম্ভব নয়।”

নয় মাসব্যাপী গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

শুধু ২৫ মার্চের গণহত্যা নয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন নয় মাস যে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তান বাহিনী, আন্তর্জাতিকভাবে সে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বেনারকে বলেন, “২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কোনো দরকার নেই। এটা আমাদের জাতীয় একটি দিবস। কিন্তু নয় মাস ধরে যে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তান বাহিনী, সেই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। যেমনভাবে রুয়ান্ডা, আর্মেনিয়া এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে।

তাঁর মতে, “এ ক্ষেত্রে প্রথমে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে স্বীকৃতি নিতে হবে। তারপরেই আমরা জাতিসংঘে যেতে পারব।”

শাহরিয়ার কবির বলেন, “বিভিন্ন দেশকে জানাতে একাত্তরের গণহত্যা এবং এর ব্যাপকতা সম্পর্কে গবেষণাপত্র, প্রামাণ্যচিত্রগুলো ঢাকার সকল কূটনৈতিক মিশন, বিদেশে আমাদের সকল দূতাবাসে পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট মেম্বার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠাতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।