গ্রিসে বিধ্বস্ত বিমানে কোনও অস্ত্র ছিল না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
2022.07.18
ঢাকা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র জন্য কেনা ‘মর্টারশেল’ বহন করা ইউক্রেনের একটি কার্গো বিমান বাংলাদেশে আসার পথে গ্রিসের কাভালা শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় রোববার বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং সার্বিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বিমানটিতে স্থলমাইন ছিল।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, ওই বিমানে মর্টারশেল (গোলাবারুদ) ছিল।
বাংলাদেশ ১৯৯৮ সাল থেকে স্থলমাইনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্ণেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বেনারকে বলেন, প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিচালকের অফিস ঠিকাদারের মাধ্যমে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জন্য প্রশিক্ষণ মর্টার শেল ক্রয় করে। এগুলো বহন করা বিমানটি গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়।
তিনি বলেন, এই বিমানে কোনও অস্ত্র ছিল না এবং এই চালানটি বীমার আওতায় ছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, মর্টারশেল বহন করা ইউক্রেনের অ্যান্টোনভ বিমানের আটজন ক্রুর সবাই মারা গেছেন।
কেন সার্বিয়া থেকে গোলাবারুদ কেনা?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ সোমবার বেনারকে বলেন, “যুগোশ্লাভিয়ার সাথে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা ছিল। তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে কিছু মর্টার দিয়েছিল। আবার যুগোশ্লাভিয়া থেকে কিছু মর্টার কেনাও হয়।”
তিনি বলেন, “এগুলো বর্তমান যুগে খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না। আমাদের এখানে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিজিবি কিছু মর্টার ব্যবহার করে থাকে।”
মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বলেন, “কিন্তু মর্টারগুলো ব্যবহারের জন্য শেল দরকার। সেগুলো পৃথিবীর অন্যকোনও দেশ তৈরি করে না। যুগোশ্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর সার্বিয়ান কোম্পানী এগুলো তৈরি করে। এ কারণে সার্বিয়া থেকে মর্টার শেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
তিনি বলেন, “দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী, এই চালানের কোনও দায়দায়িত্ব বাংলাদেশের নয়; সার্বিয়ার যে কোম্পানী এগুলো সরবরাহ করছিল তাদের দায়দায়িত্ব। বাংলাদেশ কেবলমাত্র গ্রাহক।”
আরেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন সোমবার বেনারকে বলেন, স্বাধীনতার পর সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। এর কারণ যুগোশ্লাভিয়া এবং বাংলাদেশ দুই দেশই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য ছিল।
জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য কিছু পদাতিক মর্টার দেয়। সেগুলো এখনও প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহৃত হয়।”
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, “এই মর্টারশেলগুলো আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়ে থাকে। মর্টারশেল কেনার দরপত্র আহ্বান করা হলে গোলাবারুদই সরবরাহ করতে হবে। মর্টারশেল ক্রয় দরপত্রের বিপরীতে ল্যান্ডমাইন অথবা অন্য কোনও কিছু সরবরাহ করার সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “আরেকটি কারণ হলো, যেসব দেশের আকাশ সীমা ব্যবহার করে এই মর্টার শেল অথবা অন্য কোনও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন করা হবে, সেসব দেশকে পরিবহনকৃত দ্রব্যের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে ওইসব দেশ সেগুলো পরিদর্শন করতে পারবে।”
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, “আরেকটি কথা হলো, বাংলাদেশে কেন ল্যান্ডমাইন আমদানি করতে যাবে? বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করে না। আমরা ল্যান্ডমাইন ব্যবহার বিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ।”
তিনি বলেন, “সাধারণত দেখা যায়, এই ধরনের গোলাবারুদ বহনকারী বিমানগুলো খুব পুরানো ও নিম্নমানের হয়। এর কারণ এগুলোর পরিবহন খরচ খুবই কম। সেকারণে ঠিকাদাররা এমন এয়ারক্রাফট পছন্দ করেন।”
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, “এখন ঠিকাদারদের কাগজপত্র পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে যে, বিমানটিতে কী ছিল?”
সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও ক্ষতি ঠেকাতে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কানাডার রাজধানী অটোয়ায় মাইন নিষিদ্ধ করে একটি চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী অ্যান্টি পারসোনেল মাইনের মজুদ, প্রস্তুত এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৬৪ দেশের মধ্যে ১৩৩টি দেশ এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং বাংলাদেশ তাদের একটি।
তবে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি।
২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পর বাংলাদেশ সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ কারণে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী নিহত ও আহত হয়।
ল্যান্ডমাইন ব্যবহার বন্ধে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালের কনভেনশন বাস্তবায়নের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ১৬১ দেশ ভোট দেয় এবং ১৯টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। ওই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কোনও ভোট পড়েনি।