নতুন মামলায় ফের জেলে হলমার্কের জেসমিন
2016.11.01

অর্থ আত্মসাতের নতুন একটি মামলায় ফের গ্রেপ্তার হলেন বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার বংশাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারি ঘটনায় নন-ফান্ডেড অংশের অনুসন্ধানের প্রথম পর্যায়ে এদিন সকালেই জেসমিনসহ ১৬ জনের মামলাটি করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদিন। তাঁদের বিরুদ্ধে ৮৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিল থানায় করা ওই মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ এবং সোনালি ও জনতা ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ৮৫ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
হল-মার্কের চেয়ারম্যানকে আটকের বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বেনারকে বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পরে তাকে গ্রেপ্তার করে রমনা থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।”
বুধবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে হলমার্ক সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেয়। ওই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে।
সেসময় জেসমিনসহ অন্যান্যরা আটক হলেও পরে জামিনে মুক্ত হন তারা। এবার নতুন মামলায় আটক হওয়ার পাশাপাশি ওই ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের নাম ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
নতুন এ মামলার আসামিরা হলেন হলমার্কের কর্মকর্তা মীর জাকারিয়া ও মো. জাহাঙ্গীর, সোনালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. সাইফুল হাসান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেরুন্নেসা মেরী, এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. আবদুল মতিন, জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আজমুল হক ও এস এম আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এজিএম আবদুল্লাহ আল মামুন, জেসমিন আখতার ও মো. ফায়েজুর রহমান ভূঁইয়া, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মো. সাখাওয়াত হোসেন জিনিয়া জেসমিন এবং মোছা. জেসমিন খাতুন।
মামলার এজাহারে থেকে জানা যায়, নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আনোয়ারা স্পিনিং মিলস-এর মালিক এবং মীর জাকারিয়াকে ম্যাক্স স্পিনিং মিলস-এর মালিক সাজিয়ে জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখায় একটি হিসাব খোলেন হলমার্কের চেয়ারম্যান ও এমডি। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির কোনো মালামাল আমদানি-রপ্তানি না হলেও এ বিষয়ক ভুয়া রেকর্ড পত্র তৈরি করেন তারা।
সেসব রেকর্ড পরে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখায় পাঠানো হয়। এখান থেকেই ওই সব ভুয়া কাগজপত্রের বিপরীতে আনোয়ারা স্পিনিং মিলস ও ম্যাক্স স্পিনিং মিলস এর হিসাবে বিলের সমপরিমাণ মূল্য ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৬ টাকা জমা হয়। সে টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এর আগে সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে তিন হাজার ৬০৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুদক সর্বমোট ৩৮টি মামলা দায়ের করেছিল। এর মধ্যে ২৭টি মামলা করা প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে। ফান্ডেড এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে ১১টি মামলায় ২৬জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুটি এবং মার্চে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন ও পরস্পর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অপরাধে বাকি নয়টি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। যার সবকটিতেই জেসমিন ইসলাম অন্যতম আসামি।
এদিকে নন-ফান্ডেড এক হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধানে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। যারা গত বছরের শেষ দিকে কাজ শুরু করে মঙ্গলবার প্রথম মামলা দায়ের করে। শিগগিরই এমন আরও কয়েকটি মামলা মামলা হবে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
বিচার হবে বলে নতুন আশা
আর্থিক খাতের বড় কেলেঙ্কারির সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে হলমার্ক। অর্থ কেলেঙ্কারির এই ঘটনা নিয়ে দেশে কড়া সমালোচনা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া হওয়ায় বিচারের সম্ভাবনা দেখছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বিচারহীনতার সমতুল্য। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক লুটের মতো গুরুতর বিষয়ে এত বছরেও বিচার না হওয়া জাতির জন্য হতাশার বিষয়।”
হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিচার দীর্ঘসূত্রতায় পড়ার কথা জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “অনেক সময় সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকেও বিষয়টি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে কিনা দেখার বিষয়।”
তবে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আশা করা যায়, প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।”
ব্যাংকিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অনিয়ম করে যদি কেউ বিচারহীনতার সংস্কৃতি উপভোগ করে, তাহলে সেটা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।