বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা চালু
2016.03.24

দরিদ্র মানুষের জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য বিমা চালু হলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বিমা চালু থাকলেও বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।
বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিমার উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির (এসএসকে) আওতায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী, ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলায় এই বিমা চালু হলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ) সিদ্ধান্তে এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবার কথা বলা আছে। মূলত তিনটি শর্তপূরণ সাপেক্ষে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। যে সব পরিবারের বসবাসের ঘরবাড়ি, জমিজমা ও স্থায়ীভাবে উপার্জনের উপায় নেই তারা স্বাস্থ্য বিমা সুবিধা পাবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি উপজেলার প্রায় এক লাখ দরিদ্র মানুষ এই স্বাস্থ্য বিমা কার্ড পাবে।প্রথম দফায় ৩০ হাজার দরিদ্র পরিবারকে স্মার্ট স্বাস্থ্যবিমা কার্ড দেওয়া হলো। পর্যায়ক্রমে এই সেবার আওতা বাড়ানো হবে।
“এখন আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে টাকা পয়সার চিন্তা করতে হবে না। এই কার্ড দিয়েই চিকিৎসা নিতে পারব। এটা আনন্দের খবর,” টেলিফোনে বেনারকে জানান কালিহাতী উত্তর বেতডোবা গ্রামের ফরিদা বেগম, যিনি গতকাল বিমা কার্ড নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কয়েকজন দরিদ্র মানুষের হাতে স্বাস্থ্য বিমা কার্ড তুলে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কেউ যাতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হন সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র মানুষের জন্য এই স্বাস্থ্য বিমার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই বিমার নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অতি দরিদ্র মানুষ যেন বিনা মূল্যে জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে পারে সেই লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
“সরকার জনগণের চিকিৎসা সেবা এবং বিদ্যুতের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনে পদ্মাসেতু, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিদ্যুতের আলোর কারণেই মানুষ আওয়ামী লীগকে আবার নির্বাচিত করবে,” মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলায় দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর জরিপ করা হয়েছে। প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে একটি করে স্বাস্থ্য বিমা কার্ড দেওয়া হবে। ওই কার্ডে ওই পরিবারের সকল সদস্যের নাম উল্লেখ থাকবে।
“বিমা কার্ডধারীরা চিকিৎসার জন্য প্রথমে তার নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাবেন। সেখানে চিকিৎসা সুবিধা পর্যাপ্ত না হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো (রেফার) হবে। তারা টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বিনা মূল্যে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ পাবেন,” বেনারকে জানান টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন সৈয়দ ইবনে সাইদ।
তিনি বলেন, পরিবার প্রতি একজনকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সুবিধা দিতে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হবে। এই কার্ডধারীরা পঞ্চাশটি নির্দিষ্ট জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা পাবেন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল থেকে।
“প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার পরিবারের সদস্য সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা, কাশি থেকে শুরু করে হাড় ভাঙা, হার্ট, কিডনিজনিত জটিলতাসহ ৫০ ধরনের চিকিৎসা বিনা মূল্যে পাবেন,” জানান সিভিল সার্জন।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমা কোম্পানি গ্রিন ডেলটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গ্রিন ডেলটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ক চুক্তি সই হয়।