গরম আর লোডশেডিংয়ে নাকাল দেশবাসী
2017.05.24
ঢাকা

রোদে খা খা করছে রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশ। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছে গ্রামবাংলার মানুষ। বেড়ে গেছে রোগবালাই।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা তীব্র নয়, মৃদু দাবদাহ। তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত ৪০ না ছুঁলেও মনে হচ্ছে তার বহুগুণ। গরমের সঙ্গে আদ্রতার আধিক্যের কারণেই এমনটা মনে হচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।
এই দাবদাহ আরও বাড়তে পারে এবং বেশ কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন। তবে সবটাই নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। বৃষ্টি শুরু হলে দাবদাহ কমবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী বুধবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চলতি মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তবে এক্যুরেট ওয়েদার ডটকম বলছে ঢাকায় দিনের সর্বোচ্চ তামাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা আদ্রতার কারণে ৪৮ ডিগ্রির পর্যায়ে অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বাতাসে আর্দ্রতা ৬০ শতাংশের বেশি থাকায় অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে।”
লোডশেডিং বেশি হচ্ছে গ্রামে
প্রখর রোদ ও গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। অন্যদিকে চাহিদা অনুয়ায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন করতে পারছে না বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তাই লোডশেডিং দিয়েই ঘাটতি মোকাবেলা করছে তারা।
পিডিবি সূত্র জানায়, এখন প্রতিদিনই চাহিদা গড়ে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকলেও উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। বন্ধ কেন্দ্রগুলো চালু না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থাই চলবে।
বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরে লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় ১০ ঘণ্টা করে। এতে ব্যবসা–বাণিজ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিনের বেশির ভাগ সময়ে লোডশেডিং হওয়ায় ক্রেতাদের আনাগোনা কমেছে।
উত্তরাঞ্চলীয় জেলা শহর রংপুরের মুন্সীপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ তারেক বাপ্পী টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “এখানে দিনের বেলা গরমে দুর্বিষহ অবস্থা। তার ওপর শহরে প্রতিদিন লোডশেডিং হয়।”
পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক স্বপন বাগচী বেনারকে বলেন, “গ্রামাঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড় জোর ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। তবে শৈলকুপা সদরে দিনে এক থেকে দু’ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। বাকি সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।”
রোগব্যাধির প্রকোপ
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে রাজধানীর কর্মজীবী মানুষের কষ্ট বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে রোগব্যাধি। পানিশূন্যতার কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে।
রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে দিনে প্রায় ৫০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে রোগীর এ হার অনেক কম থাকে। চিকিৎসকেরা দাবদাহে রোদ এড়িয়ে চলা এবং বিশুদ্ধ পানি পান করা পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এ রকম তাপমাত্রায় জীবাণুর আচরণ বদলে যায়। ফলে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার সমস্যাগুলো বেশি হয়। শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে বাইরের তাপমাত্রার অসামাঞ্জস্যতার কারণে জ্বর ও শরীর ব্যথা হতে পারে।”
ওই চিকিৎসকের মতে, স্বস্তি পেতে শরবত ও পানীয়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে। কিন্তু যেখানে সেখানে পানি ও শরবত পানের কারণে ডায়েরিয়া ও বমি হতে পারে।
এ রকম পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব রোদ ও গরম পরিহার করা, শরীর আবৃত রাখা এবং টাইট পোশাক না পরার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “তরল খাবার বেশি খেতে হবে। দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করতে হবে এবং বেশি ঘামলে ওর স্যালাইন পান করতে হবে। তা ছাড়া মৌসুমি ফল বেশি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।”
এলনিনোর পর্যায়ে বাংলাদেশ
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে তাকে এলনিনো ধরা হয়। সাধারণত এই তাপমাত্রা ৩ মাস অতিক্রম করলে অফিশিয়ালি এলনিনো ঘোষণা করা হয়। গত বছরও শক্তিশালী এলনিনো ছিল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলামের বরাত দিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এ বছরও এলনিনোর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর প্রভাবে গত বছর আফ্রিকা থেকে শুরু হয়ে পূর্ব এশিয়া হয়ে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার প্রভাবে বাংলাদেশেও প্রচণ্ড দাবদাহ হয়েছিল। এবারও সেটাই হচ্ছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এর আগে ১৯৯৫, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে দাবদাহ হয়েছিল। ৯৫-এর দাবদাহ ঘুরেফিরে দেশের ১২টি জেলায় মোট আট দিন ছিল। এরপর ২০০৭ সালে সাতটি জেলায়, ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে ছয়টি জেলায় পাঁচ থেকে ছয় দিন দাবদাহ বয়ে গিয়েছিল। গত বছরও আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণ ছিল টানা ২৪ দিন।