সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে হেফাজতের বিক্ষোভ

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2017.02.24
সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ। ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে নতুন নির্মাণ করা ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়েছে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক কট্টরপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে গত ডিসেম্বরে হাইকোর্ট চত্বরে গ্রিক দেবী থেমিসের এ ভাস্কর্যটি স্থাপিত হয়।

ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবিতে সারা দেশে ধারাবাহিক কর্মসূচির ডাক দিয়েছে কওমি শিক্ষক, ছাত্র, ইমাম ও তাঁদের শিষ্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার সমর্থক গতকাল শুক্রবারও ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে। ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণের বাইরে জুমার নামাজের পর এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচিতে ২০১৩ সালে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবিতে করা সমাবেশের চেয়ে বেশি লোক সমাগম হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। মার্চের প্রথমদিকে সংগঠনটি বড় ধরনের কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে।

ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত এই ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি হেফাজতের। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭।
ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত এই ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি হেফাজতের। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো
গতকালের সমাবেশে হেফাজত নেতারা হুমকি দিয়েছেন যে, ভাস্কর্যটি অপসারণ করা না হলে ‘শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদ সংশ্লিষ্ট অনেকেই হেফাজতের আদর্শ অনুসরণ করেন।

২০১৩ সালের ৫ মে প্রায় ৫০ হাজার হেফাজত কর্মী ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও নাস্তিকদের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি তুলে মতিঝিল এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় কয়েক ঘণ্টা ধরে তাঁরা বিভিন্ন ভবন এবং যানবাহনে আগুন দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কঠোরভাবে দমন করে।

নিজেদের দাবির প্রতি অটল থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন রুহী বেনারকে বলেন, “দাঁড়িপাল্লাধারী নারীর মূর্তি ন্যায়বিচারের নিদর্শন হতে পারে না।”

তাঁর মতে, “আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক এবং কোরআন ন্যায়বিচারের নীতিমালা। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে একটি গ্রিক বা রোমান নারী মূর্তি স্থাপন করা মানুষের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

এ মূর্তি না সরালে সারা দেশে বিক্ষোভ ও পদযাত্রার হুমকি দিয়েছেন রুহী। আগামী ৩ মার্চ জুমার নামাজের পরে এ সমাবেশের প্রস্তাবিত তারিখ ধরা হয়েছে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে চার বছর আগের চেয়ে বেশি লোক সমাগমের হুমকি পরদিন এ কথা জানালেন মহিউদ্দিন রুহী।

বাংলাদেশ কি ইসলামি রাষ্ট্র?

গত ডিসেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ডান হাতে তলোয়ার আর বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই নারী মূর্তি তৈরি করেছেন ভাস্কর মৃণাল হক।

এই ভাস্কর্যটি সরকার হেফাজতের দাবি অনুযায়ী অপসারণ করবে বলে মনে করেন না রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বেনার নিউজকে তিনি বলেন, “সারা দেশে শত শত ভাস্কর্য আছে। তাঁদের (হেফাজতের) চাহিদাও সীমাহীন। তাঁদের সব কথা কী শোনা সম্ভব?”

হেফাজত নেতা রুহী জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

উচ্চ আদালতকে চ্যালেঞ্জ করা হেফাজতের জন্য এটাই প্রথমবার নয়। এর আগে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় না এলে দেশ অচল করার হুমকি দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম।

১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি করা রুল ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ খারিজ করে দেয় তিন সদস্যের হাই কোর্ট৷ যা ছিল হেফাজতের আরও একটি বিজয়।

হেফাজতের এসব দাবির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন নিহত ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি বেনারকে বলেন, “কেন এই ভাস্কর্য সরানো হবে? বাংলাদেশ কি ইসলামিক রাষ্ট্র? এটা একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আর এই ভাস্কর্যটি ন্যায় বিচারের প্রতীক।”

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “হেফাজতের কোনো জনসমর্থন নেই। ইসলাম রক্ষার নামে তারা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে মাত্র।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।