ঢাকায় হচ্ছে বিশ্বমানের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট
2017.08.11
ঢাকা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বমানের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-সংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় পৌনে দুই একর জমির ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৫২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হচ্ছে। যার নাম রাখা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি।
এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে কোনোভাবে পুড়ে যাওয়া রোগীরা উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
“এর নির্মাণকাজ ২৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধন করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী,” বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
“দগ্ধ রোগীদের সুচিকিৎসা এবং উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি নির্মিত হচ্ছে। জনগণের আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে উন্নত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসাসেবা প্রদানই হবে এর উদ্দেশ্য,” বলেন তিনি।
বিদ্যমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎস্পর্শ, অগ্নিকাণ্ড, রাসায়নিক ও তরল জাতীয় দাহ্য পদার্থে দগ্ধ হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বহির্বিভাগে প্রায় ৩৫ হাজার ও ইনডোরে প্রায় ৬ হাজার রোগী ভর্তি হয় বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
“এসব দগ্ধের চিকিৎসার জন্য দেড় হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন হলেও চিকিৎসক আছেন মাত্র ৬৯ জন। এই ইনস্টিটিউট হলে দেশের মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে,” তিনি জানান।
বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এমএস এবং মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) এফসিপিএস কোর্স করানো হচ্ছে।
সেখানে প্রতিবছর মাত্র ২ থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন। ইনস্টিটিউটটি স্থাপিত হলে প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন উচ্চ শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। এতে দেশে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর পোড়া রোগীদের চিকিৎসার দুরবস্থার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তিনি সারাদেশে বার্ন ইউনিট খোলার নির্দেশনা দেন। সে নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমানে সীমিত পরিসরে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে বার্ন ইউনিট চালু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের বেড বেড়ে প্রথমে ১০০ ও পরে ৩০০ করা হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে পেট্রল বোমায় দগ্ধ হাজার হাজার রোগী এই বার্ন ইউনিট থেকেই চিকিৎসা নেন।
ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “সে সময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ছুটে গিয়েছিলেন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁরই নির্দেশে এ দেশে প্রথম বিশ্বমানের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কাজ হাতে নেওয়া হয়,” জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
নতুন স্থাপনায় যা থাকছে
১৭ তলা ভিতের ওপর গড়ে তোলা ১১ তলাবিশিষ্ট এই প্রতিষ্ঠানে ৪০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), ৬০টি হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) ও ১২টি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটার থাকবে। এ ছাড়া থাকবে চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কিল ল্যাব, ক্লাসরুম, কনফারেন্স রুম, উন্নতমানের ডায়াগনস্টিক ল্যাব।
প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বেনারকে বলেন, “৫০০ বেডের এই হাসপাতালে ১ হাজার ২০০ জন নার্স ও ৫০০ চিকিৎসক থাকবেন। বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। বাংলাদেশি নার্সদের আন্তর্জাতিক মানে সেবা দেওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই লক্ষ্য।”
তিনি জানান, “তিন বছর মেয়াদে ধাপে ধাপে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। গত এপ্রিলে এক ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ২০ জন ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ জন ফিজিওথেরাপিস্টকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বেনারকে বলেন, “পোড়া রোগীদের মধ্যে ৯৮ ভাগের প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হয়। পোড়া ও প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসা দুটোই ব্যয়বহুল।”
নতুন এই প্রতিষ্ঠানে রোগীদের চিকিৎসা ও সার্জারি বিনা মূল্যে করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যেতে হবে না।”
“শুধু পোড়া রোগীই নয়, এখানে চিকিৎসাসেবা পাবেন ক্যানসার, এসিড সন্ত্রাসের শিকার হওয়া, দুর্ঘটনায় আহত, জন্মগত ত্রুটি নিয়ে আক্রান্ত, কলকারখানায় আহত রোগীরাও। ইনস্টিটিউটটি হবে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ এখানে একজন রোগী এলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। তাকে কোনো টেস্ট বা পরীক্ষা করার জন্য বাইরে যেতে হবে না,” জানান আবুল কালাম।