দু সপ্তার বেশি সময় ধরে নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাস

প্রাপ্তি রহমান ও জেসমিন পাপড়ি
2017.10.26
ঢাকা
উৎপলকে ফিরে পেতে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁর পরিবার ও সহকর্মীরা। উৎপলকে ফিরে পেতে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁর পরিবার ও সহকর্মীরা। ২৬ অক্টোবর ২০১৭।
বেনারনিউজ

গত ১৬ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক। তিনি পূর্ব পশ্চিম বিডি নিউজ নামে একটি অনলাইন পোর্টালের সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস।

তাঁর পরিবার ও কর্মস্থলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করলেও এখনো খোঁজ মেলেনি উৎপলের। নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ চেয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন উৎপলের বাবা চিত্ত রঞ্জন দাস। এ সময় তার বড় দুই বোন ও এক ভাই এবং সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎপলের নিখোঁজ হওয়ার কারণ জানা যায়নি। তবে নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিন পরে গত ২৩ অক্টোবর রাতে ও ২৪ অক্টোবর সকালে দু’দফায় উৎপলের বন্ধ থাকা মোবাইল থেকে তার বাবাকে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলে জানিয়েছন উৎপলের বাবা। তবে উৎপলের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলেই অন্য প্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেওয়া হয়। এরপর থেকে আবারও ওই মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

উৎপলের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবার ও পূর্ব পশ্চিম বিডি অনলাইন।

এই তরুণ সাংবাদিক নিখোঁজ প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

“উৎপল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ব্যাটালিয়নগুলো তাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। তবে এখনো তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। উৎপলের পরিবারের সদস্যরা আজ (বৃহস্পতিবার) র‌্যাব সদর দপ্তরে এসেছিলেন,” মুফতি মাহমুদ খান বলেন।

এদিকে উৎপল দাস নিখোঁজ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এক বিবৃতিতে আসক বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উৎপল দাসের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে। পদক্ষেপও নিতে হবে যথাযথ।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন চিত্ত রঞ্জন দাস। পেশায় শিক্ষক বাবার ছোট ছেলে উৎপল।

“১০ অক্টোবর উৎপলের সঙ্গে তার মায়ের শেষ কথা হয়। এরপর থেকে আমরা মুঠোফোনটি বন্ধ পাচ্ছি। আমি শুধু আমার ছেলেটাকে জীবিত ফেরত চাই,” চিত্তরঞ্জন বলেন।

উৎপলের বোন বিনীতা রানী দাস জানান, “ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমার মা শয্যাশায়ী। আপনারা একটু চেষ্টা করুন, যেন ভাইকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারি।”

পূর্ব পশ্চিম বিডি নামের যে অনলাইন পোর্টালে উৎপল কাজ করতেন, সেটিও বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে। এই পোর্টালের সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি জানি না পূর্ব পশ্চিম বিডি বন্ধ রয়েছে কেন। আমরা বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কাছে গিয়েছি। উৎপলও গিয়েছে।”

ওই পোর্টালটি বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে উৎপলের নিখোঁজ হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চাইলে পীর হাবিব বলেন, তিনি তা মনে করেন না। তা ছাড়া উৎপল নিখোঁজ হওয়ার আগে ফেসবুকে একটি সংবেদনশীল ইস্যুতে পোস্ট দেয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে তাঁকে গুম করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পীর হাবিব বলেন, উৎপল ফেসবুকে কী লিখছে সে সম্পর্কে তাঁর জানা নেই।

প্রসঙ্গত, পূর্ব পশ্চিম বিডি বন্ধ হওয়ার আগে সাউথ এশিয়া মনিটরে গত ২৩ সেপ্টম্বর প্রকাশিত সুবীর ভৌমিকের লেখা একটি প্রতিবেদন পুনর্মুদ্রণ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দ্যেশে একটি ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা ঘটে।

তবে পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই সংবাদটি সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, “সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর উপর ২৪ আগস্ট তারিখে হামলার খবরটি সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।"

সংবাদ সম্মেলনে উৎপলের পরিবার এবং পূর্ব পশ্চিম বিডি ডট নিউজের পক্ষ থেকে উৎপলকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত আনার দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান তারা।

লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পূর্ব পশ্চিম ডট নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, “উৎপলের নিখোঁজ হওয়াটা আমাদের কাছে এখন পারিবারিক বিষয়ের মতো। আমরা ধৈর্য ধরেছি। আমি এমন কোনো ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী সম্পাদক নই যে তাকে ফিরিয়ে আনব। তবে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব। উৎপল ফিরে আসুক মায়ের কোলে, ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।”

তিনি বলেন, “উৎপল কোথায় কেমন আছে, কী ঘটছে তার জীবনে, কেন তার খোঁজ মিলছে না বুঝতে পারছি না। একটি গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে একজন সংবাদকর্মী দিনদুপুরে নিখোঁজ হয়ে যেতে পারে না।”

লিখিত বক্তব্যে পীর হাবিবুর রহমান জানান, উৎপল দাস গত ১০ অক্টোবর দুপুর ১টা পর্যন্ত অফিস করেন। এরপর আর তিনি কর্মস্থলে আসেননি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ায় ২২ অক্টোবর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ছেলের সন্ধান না পেয়ে পরদিন নরসিংদীর রায়পুরার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ছুটে এসে আরও একটি জিডি করেন চিত্তরঞ্জন দাস।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ বলেন, “আমরা নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবির আন্দোলনের এজেন্ডার সঙ্গে উৎপল দাসের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। উৎপলকে যত দিন ফিরে না পাব, তত দিন আমরা মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করব।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।