নিখোঁজ সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টায় দুই মামলা, অ্যামনেস্টির উদ্বেগ
2020.04.01
ঢাকা

নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে দুইটি মামলা দায়েরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যদিও দ্বিতীয় মামলা দায়েরের বিষয়টি এতদিন প্রকাশ পায়নি।
বুধবার দেওয়া অ্যামনেস্টির বিবৃতির সূত্র ধরে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে বেনার। মামলার কপি বেনারের হাতে এসেছে। উসমিন আরা বেলি নামে সরকারি দল আওয়ামী লীগের একজন সদস্য রাজধানীর হাজারিবাগ থানায় শফিকুলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলাটি করেন গত ১০ মার্চ। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অসত্য তথ্য প্রকাশ ও মানহানির অভিযোগ আনেন বেলি।
শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলাটির কথা স্বীকার করেন হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া।
তিনি বেনারকে বলেন, “গত ১০ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন উসমিন আরা বেলি নামে এক নারী। তিনি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অসত্য তথ্য প্রকাশ ও মানহানির অভিযোগ আনেন।”
“তবে এই মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন তারাই মামলাটি তদন্ত করছে,” জানান তিনি।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, গত ৯ মার্চ রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর শফিকুলসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা করার পরদিন নিখোঁজ হন তিনি।
পরদিন ১০ মার্চ শফিকুলের সর্বশেষ অবস্থান সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হাতিরপুলের অফিস থেকে বের হয়ে একটি বাইকে চড়ে যেতে দেখা যায় দৈনিক পক্ষকালের এই সম্পাদককে। বিজ্ঞপ্তিতে সিসিটিভি ফুটেজটিও প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এ ঘটনা তাঁর গুম হওয়ার আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে এবং বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা জানতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জরুরি তদন্ত শুরু করতে হবে।
অ্যামনেস্টির দাবি, শফিকুল কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থার হেফাজতে থাকলে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলা তুলে নিতে হবে।
সাংবাদিক শফিকুল নিখোঁজ হওয়ার সাথে মামলার সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বেনারকে বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, তাঁর মোটরসাইকেলে ডিভাইস যুক্ত করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আবার তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক থানায় মামলা করেছেন রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা। ফলে এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, মামলা দায়েরের সাথে তাঁর গুম সম্পর্কিত।”
“ফলে সংবাদকর্মী শুধু না, সচেতন মানুষের মনেও ভীতির সঞ্চার হয়েছে ক্ষমতাধরদের কোপানলে পড়ে সাংবাদিক শফিকুল গুম কিনা,” বলেন তিনি।
তাঁর মতে, “এখন সরকারের উচিত হবে নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুলকে উদ্ধার করা বা কী ঘটেছে সেটা জনগণকে জানানো এবং তাঁকে গুম করার পেছনে যারা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”
নিরাপত্তাহীনতায় পরিবার
নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলামের ছেলে মনোরম পলক বেনারকে বলেন, “বাবার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়েছে সেটি আমরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া বিবৃতির মাধ্যমে জানতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “এত দিন পার হলো কিন্তু বাবাকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তাঁরা (পুলিশ) যে আদৌ কোনো চেষ্টা করছেন, তেমন কোনো নমুনাও দেখতে পাচ্ছি না।”
বর্তমানে শফিকুল ইসলামের পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে উল্লেখ করে মনোরম বলেন, “একা চলতেও ভয় পাই আমরা। আমার বাবা পেশায় সাংবাদিক ছিলেন, তাঁকে অনেক মানুষ চিনেন। তাঁরই যদি এই পরিণতি হয়, তাহলে আমাদের কী হবে, একবার ভাবুন।”
সাংবাদিক শফিকুল নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে চকবাজার থানায় মামলা করে তাঁর পরিবার। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার বেনারকে বলেন, “নিখোঁজ শফিকুল ইসলামের পরিবারের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের নম্বর তাঁদের কাছে দেওয়া আছে।”
“যদি কোনো নিরাপত্তা বা যেকোনো বিষয়ে অস্বস্তিবোধ করেন তাহলে তাঁরা যেকোনো সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন,” বলেন তিনি।
নিখোঁজ শফিকুল ইসলামকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানান মওদুদ হাওলাদার।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “তাঁকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা তাঁর সর্বশেষ অবস্থানের একটি ভিডিও ফুটেজও পেয়েছিলাম। আরও ফুটেজ জোগাড় করার চেষ্টা চলছিল। এরই মধ্যে ‘লক ডাউন’ শুরু হলো।”
এই সাংবাদিকের গুম হওয়ার যে আশঙ্কা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল করেছে বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। তবে তাঁকে খুঁজে পেতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”