প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আটক, পরে মুক্তি
2018.04.25
ঢাকা

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবার এবং বর্তমান সরকারকে ব্যঙ্গ করে ছবি ও তথ্য প্রচারের অভিযোগে আটক এ কে এম ফাহিম মাসরুরকে (৪৮) জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) এই সাবেক প্রেসিডেন্ট দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন চাকরির বাজার বিডিজবস’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় বুধবার দুপুরে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর ছয় দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টে প্রেরণ করার কথাও বলেছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল আলম।
তবে “এখানে ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে,” বলে ছাড়া পাবার পর বিকেলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন ফাহিম মাসরুর।
তাঁর বক্তব্য, “বেসিকালি আমাকে আলোচনা করার জন্য আনা হয়েছিল। যেহেতু আমার নামে একটা অভিযোগ আসছে, ফেসবুকের পোস্ট নিয়ে। এটার সত্যতা যাচাই করার জন্য তারা (পুলিশ) এমনটা করেছিল।”
“গত ২২ এপ্রিল কাফরুল থানায় করা এক মামলার প্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়,” যোগ করে তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষা সম্পাদক মো. আল সাদিক ওই মামলাটি দায়ের করেন।
তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার, সংবিধান এবং বর্তমান সরকারকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ফেসবুক পোস্ট, ছবি ও তথ্য প্রচারের মোট আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, “ফাহিম মাসরুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনসহ উসকানিমূলকভাবে মিথ্যা ও অপমানমূলক তথ্য আপলোড করে অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং একই ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।”
“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরূপ মিথ্যা, মানহানিকর আইনশৃঙ্খলার অবনতি সৃষ্টিকারী রাষ্ট্র ও ব্যক্তি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে,” বলেও এখানে উল্লেখ করা হয়।
গত ১২ এপ্রিল বিষয়গুলো চোখে পড়ার কথা জানিয়ে অভিযোগে সাদিক আরও বলেন, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে এজাহার দিতে সামান্য বিলম্ব হলো।”
“আমি খেয়াল করে দেখেছি সব ‘বার্নিং ইস্যু’ নিয়েই তিনি ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দেন। সর্বশেষ কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালেও ‘চাকরি দে, নয়তো উন্নয়ন খাবো’ টাইপ স্ট্যাটাসগুলো দিয়েছেন,” অভিযোগকারী বেনারকে বলেন।
সাদিকের অভিমত, “মাসরুর সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তাঁর দেখাদেখি সমাজের আরও ১০জন মানুষ এ রকম উসকানিমূলক প্রচারণা শুরু করতে পারেন। যে কারণে আমার মনে হয়েছে তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে থামিয়ে দিতে পারলে হাজার মানুষ এমনিই থেমে যাবে।”
“আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডও না। বেসিস এর পেজ থেকে তাঁকে পেয়েছি।”
নিজেকে ‘আইনের ছাত্র’ উল্লেখ করে সাদিক বলে, “তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে উপস্থাপনের জন্য প্রচুর ডকুমেন্ট আমাদের হাতে আছে।”
দুই ঘন্টা আটক ছিলেন মাসরুর
“তাঁকে রিমান্ডের জন্য আদালতে পাঠানোর খবর সম্ভবত সত্য নয়, ভুল ইনফরমেশন,” বেসিস’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর বেনারকে বলেন।
তিনি বলেন, “তাঁর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করা হয়েছিল। সেটার ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি জানি না।”
মাসরুর বেনারকে জানান, পুলিশ তাঁকে দুই ঘণ্টার মতো আটকে রেখেছিল। ফেসবুক ঘেঁটেও তাঁরা দায়ের করা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি।
এর আগে পুলিশের এডিসি নাজমুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, “ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে বিদ্রূপ করায় তাঁকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরে বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যায় ছয়টা অবধি যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিডিজবস ছাড়াও ফাহিম মাসরুর বাংলা সোশ্যাল মিডিয়া বেশতো এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী। এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২০১৮ সালে জন্য বর্ষসেরা উদ্যোক্তা (মাঝারি প্রতিষ্ঠান, সার্ভিস ক্যাটাগরি) হিসেবেও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এই পুরস্কার নেন। এ ছাড়া বেসিসের সদ্য নির্বাচিত কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি এখন সংস্থাটির পরিচালক।
কারাগারে আরেক বেসিস সদস্য
বেসিস’র সদ্য নির্বাচিত আরেক পরিচালক দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহার মামলায় একই সংগঠনের সদস্য বেঙ্গল ক্রিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম এখন কারাগারে আছেন।
গত ১০ এপ্রিল গুলশান থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় গত রোববার তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বেসিস সভাপতি বলেন, “কাল (বৃহস্পতিবার) বোধ হয় আদালতে মামলাটির শুনানি।”
এই মামলা বা গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলাকালে দেশে না থাকার কথা জানিয়ে বেসিস সভাপতি বেনারকে আরও বলেন, “দুজনই যেহেতু আমাদের সদস্য, বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে সুরাহার চেষ্টা করার সুযোগ বেসিস’র আছে।”