ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: সাংবাদিকদের সাথে সরকারের আলোচনার প্রস্তাব

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.09.27
ঢাকা
180927_Digital_law_1000.jpg ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ঢাকায় মুক্তমনা মানুষদের প্রতিবাদ। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
এএফপি

সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর প্রতিবাদে শনিবার রাস্তায় মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।

এই কর্মসূচি ঘোষণার পর ও আইন পাশের ছয় দিনের মাথায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সম্পাদকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম বেনারকে বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকার সম্পাদক পরিষদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা সেখানে যাব।”

চিঠিতে শনিবারের মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাইফুল আলম বলেন, “আলোচনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পূর্ব ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হবে। আমরা হয়তো আজকেই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো।”

সাইফুল বলেন, ওই আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “আশা করি সম্পাদকবৃন্দ সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের কথা বলবেন।”

আইন পাশের আগে না করে পরে কেন আলোচনা করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “এখন আলোচনা করছি। কোনো সমস্যা নেই। সাংবাদিকেরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাঁদের শঙ্কা ও উদ্বেগের কথা বলেছেন। আমরা তাঁদের কথা শুনব।”

তিনি বলেন, “আমরা আসলে তাঁদের কাছে জানতে চাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগ রয়েছে। এই আইনে কোনো সমস্যা থাকলে আমরা তা সমাধানের উদ্যোগ নেব।”

চিঠিতে যা বলা হয়েছে

সম্পাদকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে “আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে," বলেও উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।

চিঠিতে সম্পাদক পরিষদের ডাকা শনিবারের মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানান হাসানুল হক ইনু।

সম্পাদক পরিষদ ছাড়াও, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নেতাদেরও রবিবার বিকাল তিনটায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষের বৈঠকে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।

এখনো গেজেট হয়নি

সংসদে পাশ হওয়া আইনটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর সংসদ সচিবালয় গেজেট প্রকাশ করলে তা আইনে পরিণত হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুশাসনের জন্য নাগরিকসহ বিভিন্ন নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাক্ষর না করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানায়।

সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার উপ-সচিব নাজমুল হক বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাক্ষর করেননি। তিই এখনো গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।”

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী এইচ এম বজলুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমরা মনে করি এই আলোচনা আরো আগে হওয়া উচিৎ ছিলো। যাই হোক দেরিতে হলেও সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সাথে আলোচনায় বসছে সেটা একটি বড় বিষয়।”

বজলুর রহমান বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হয়ে গেছে। মূল আইনের চাইতে আইনটি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সে ব্যাপারে বিধিবিধান এখনো করা হয়নি। আশা করি ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিবিধানে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে, এমন কিছু রাখা হবে না।”

তিনি বলেন, “সাইবার অপরাধীদের সাজা হোক সেটা আমরাও সবাই চাই। কিন্তু কোনোক্রমেই চিন্তার স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।”

১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশের তিন দিন আগে এক বিবৃতি দিয়ে আইনটির ওপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সম্পাদক পরিষদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের ও সংবাদ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যেসব মতামত দেওয়া হয়েছিল সেগুলোকে সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করা হয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনের মোট আটটি ধারায় কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়নি। ওই ধারাগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতাকে ‘মারাত্মক’ হুমকির মুখে ফেলবে।

বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংযুক্ত ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রয়োগের বিধানকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও বর্ণনা করা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতি

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশে পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা বাক্‌স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করবে উল্লেখ করে এই আইন নিয়ে আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত দেশগুলো।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে এই আইনের বিষয়ে আরও আলোচনা অব্যাহত রাখতে এবং গত মে মাসে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অনুসরণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।