বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হলেও ভিন্নভাবে থাকছে
2017.11.29
ঢাকা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত করে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই খসড়াটি আইনে পরিণত হলে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আসছে শীতকালীন অধিবেশনে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করতে পারব বলে আশা করছি।”
তবে খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৫৭ ধারায় যেসব বিষয় আছে সেগুলোই ঘুরেফিরে নতুন আইনে থাকছে। তবে শাস্তির মাত্রা কমছে।
২০০৬ সালে আইসিটি আইন পাস হয়। এরপর ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে এর ৫৭ ধারায় বলা হয়, ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, আর এতে কারও মানহানি ঘটে কিংবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
আইনে এ ধরনের অপরাধ জামিন অযোগ্য হিসাবে ঘোষণা করে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের এবং সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
৫৭ ধারায় অপরাধের এই ধরন পাল্টে নতুন আইনের খসড়ার ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার ইচ্ছায় ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে ওই ব্যক্তির সেই কাজ হবে অপরাধ।
নতুন আইনে এই অপরাধের জন্য অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয় বা তার বেশিবার করলে অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। এই ধারার অপরাধ আমলযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য হবে
নতুন আইন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বেনারকে বলেন, “কোন কথা কার অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, তা ব্যক্তিনির্ভর এবং তা সব সময় অপপ্রয়োগ হতে বাধ্য। সেটাই হচ্ছে।”
এ ধরনের মামলা সরাসরি থানায় দায়ের হওয়া উচিত নয় বলে মত দেন তিনি। তাঁর মতে থানায় মামলা দায়েরের আগে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযোগের তদন্ত হওয়া দরকার।
সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে ৫৭ ধারাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা যেভাবে আছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তা সেভাবে থাকছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার মাধ্যমে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হবে।”
তবে বিতর্কিত ৫৭ ধারার বিলুপ্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আইনজ্ঞরা। এই ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
এ প্রসঙ্গে তিনি বেনার নিউজকে বলেন, “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সাতটি উপাদানের কথা আছে। এ সাতটি উপাদান নতুনভাবে করতে যাওয়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে ভাগ করে ঢোকানো হচ্ছে। তাহলে ওই ধারাটি বাতিল হলো কীভাবে?”
“বাতিল হবে সেই জিনিসটা যেটা আর কোথাও ব্যবহার হবে না। কিন্তু এখানে তো কোনো না কোনোভাবে চেহারা বদল করে রেখে দিচ্ছে। বিষয়টি আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি না,” বললেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা সম্পর্কিত বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত এই আইন সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে উদ্যোগ চলছে, তাকে নিরাপদ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ আইন ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা, প্রসার ও বিকাশে সাহায্য করবে।”