আংশিক নাগরিকত্ব তালিকায় বিভ্রান্ত আসামের মুসলিম সমাজ
2018.01.02
গৌহাটি, ভারত
ভারতের আসাম রাজ্য সরকার নাগরিকত্বের নিবন্ধন তালিকা আংশিকভাবে প্রকাশের একদিন পর আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে পুরো রাজ্য জুড়ে। সোমবার রাজ্যের মোট তিন কোটি বিশ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটি ৯০ লাখ নামসহ এই তালিকাটি প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম বাদ পড়ার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত ১৯৫১ সালের পর প্রথমবারের মতো তালিকাটি হালনাগাদ করা হলো। সরকারের মতে, তালিকা হালনাগাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতে বসবাসকরী আনুমানিক দুই কোটি ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ চিহ্নিতকরণ ও বিতাড়ন।
তবে রাজ্য সরকারের মতে, তালিকাটি এখনো আংশিক এবং এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত এখনো তদন্তাধীন।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করে চূড়ান্ত তালিকাটি “২০১৮ সালের কোনো এক সময় প্রকাশিত হবে,” বলে বেনারকে জানান।
প্রকাশিত তালিকা থেকে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রধান বদরুদ্দীন আজমল, তাঁর ভাই সংসদ সদস্য সিরাজউদ্দিন আজমল, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা শীলাদিত্য দেব, কংগ্রেস দলীয় নেতা নুরুল হুদা এবং অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের অনেক সদস্যের নাম বাদ পড়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবার আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূর শিলচরে তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ পড়ায় এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণ তালিকা প্রকাশ না করার ব্যাখ্যা চেয়েছে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির কাছে।
“এনআরসি সমন্বয়কারী, ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং রাজ্য সরকারকে এটা অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে যে তালিকার প্রথম অংশ থেকে কেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম বাদ পড়েছে,” বেনারকে বলেন দলটির সদস্য দেবব্রত সাইকিয়া।
তবে তালিকার প্রথম খণ্ড থেকে নাম বাদ পড়লে আতঙ্কিত না হবার জন্য বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
তিনি বলেন, “এটি শুধু এনআরসি’র খসড়ার একটি অংশ মাত্র। ভারতের প্রকৃত নাগরিকদের নাম যদি এটি থেকে বাদ পড়ে, তবে চূড়ান্ত তালিকায় সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”
সরকারের মতে, ১৯৫১ সালের নাগরিকত্ব তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও তাঁদের বংশধরদের নাম অন্তুর্ভুক্ত করার জন্য এই তালিকাটি হালনাগাদ করা হচ্ছে। পাশপাশি, ১৯৭১ সালে ২৪ মার্চের আগে থেকে যারা ভারতে বসবাস করছেন তাঁদের নামও এই তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে যারা ভারতে পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাঁদেরকে চিহ্নিত ও বহিষ্কার করা।
এ প্রসঙ্গে নাগরিত্ব তালিকা হালনাগাদ করার আন্দোলনের নেতা অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সমোজ্জ্বল ভট্টাচার্য বেনারকে বলেন, “এটা [এনআরসি] আসামকে বাংলাদেশি মুক্ত করার প্রথম পদক্ষেপ।”
এদিকে বিজেপি সরকারের নির্বাচনকালীন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশের পর সহিংসতার আশঙ্কায় ভারত সরকার রাজ্য জুড়ে অতিরিক্তি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে।
“অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম বাদ পড়া, বিশেষত সংখ্যালঘু নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া দক্ষিণপন্থী বিজেপির ক্ষমতায় আরোহনের পর আসামের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সুস্পষ্ট লক্ষণ,” বেনারকে বলে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিদ্যার অধ্যাপক মনিরুল হোসেন।