নাগরিকত্ব বাদপড়াদের জন্য আসামে নাগরিকপঞ্জি সংশোধন শুরু
2018.09.25
গৌহাটি, ভারত

রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ভারতের নাগরিত্ব থেকে বাদ পড়া মানুষকে নাম তোলার সুযোগ দিতে আজ থেকে আবার শুরু হচ্ছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সংশোধন প্রক্রিয়া।
গত ৩০ জুলাইতে প্রকাশিত খসড়া নাগরিকপঞ্জি থেকে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে যায়। যাদের বেশিরভাগই বাঙালি। বর্তমান সংশোধন প্রক্রিয়াটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দুই মাসের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে রাজ্যের আড়াই হাজার কেন্দ্রে এই সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে প্রথম দিন তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনশিপ (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য শুরুতে ১৫টি নথির যে কোনোটিতে নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে বলা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে সেটি কমিয়ে দশটিতে নিয়ে আসা হয়।
এখন বাদপড়ারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নির্ধরিত দশটি নথির যে কোনো একটি নথি দেখাতে হবে।
আবেদনকারীদের জমির দলিল, পাসপোর্ট, লাইফ ইন্সুরেন্স, ব্যাংক বা পোস্ট অফিস অ্যাকাউন্ট, জন্ম সনদ, শিক্ষাগত সনদ, আদালতের কাগজপত্র, সরকারি চাকরির প্রমাণপত্র বা যে কোনো সরকারি লাইসেন্স দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা বা তাঁদের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার আগে থেকেই, অর্থৎ ২৪ মার্চ ১৯৭১ সালের আগে থেকে ভারতে বসবাস করছেন।
প্রথম খসড়াতে নাম তোলার জন্য নথি হিসেবে ১৯৫১ সালের এনআরসি, ১৯৬৬ ও ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা, নাগরিকত্ব সনদ, শরণার্থী সনদ এবং রেশন কার্ডও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৩০ জুলাইতে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জিতে দুই কোটি আশি লাখ মানুষের নাম তালিকাভুক্ত হয়। মোট আবেদনকারী ছিলেন তিন কোটি বিশ লাখ মানুষ।
“তালিকায় নিজের নাম না ওঠার ভয়ে রাজ্যের অনেক বাঙালি আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। নতুন নীতিমালা তাঁদের সমস্যাকে আরো বড়ো করে তুলেছে,” বেনারকে বলেন কংগ্রেস দলীয় সংসদ সদস্য কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
তিনি বলেন, “এনআরসি সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা এইসব মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
সংশোধিত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতীক হাজেলা প্রস্তাবিত সংক্ষিপ্ত নথির তালিকা নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ সকল রাজনৈতিক দলই সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তাঁরা বলছেন, তালিকা সংক্ষিপ্ত করার আগে প্রতীক হাজেলা কারো সাথেই আলোচনা করেননি।
নতুন নীতিমালার বিরুদ্ধে সংসদে তাঁরা একটি সর্বদলীয় প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানা যায়।
“যদি সব দল একমত হয়, তাহলে আমরা এনআরসি সমন্বয়ক হাজেলার তালিকা সংক্ষিপ্ত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারব,” বেনারকে বলেন রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি দলীয় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটওয়ারী।
এদিকে সম্প্রতি বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ, ভারতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের ভাত উঠিয়ে দেবার হুমকি দিয়েছেন।
“এনআরসি নিয়ে বিজেপি দ্বিমুখী খেলা খেলছে। এই হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলটি হিন্দু ভোট টানতে ২০১৯ এর নির্বাচনে এনআরসিকে একটি বড়ো ইসু বানাতে চায়। এটা করতে গিয়ে দলটি আগুন নিয়ে খেলছে। পুনর্মূল্যায়ন চলা অবস্থাতেই তারা ইতিমধ্যে চল্লিশ লক্ষ লোককে অবৈধ বাংলাদেশির তকমা দিয়ে দিয়েছে। এতেই বোঝা যায় সামনের নির্বাচনে এই ইসুটি একটি মারাত্মক আকার ধারণ করবে,” সম্প্রতি একটি নিউজ চ্যানেলে বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব।
সরকারের মতে, ১৯৫১ সালের পর প্রথমবারের মতো এনআরসি হালনাগাদ করার উদ্দেশ্য হলো ভারতে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি অবৈধ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত ও বহিষ্কার করা।