চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে মালামাল পরিবহন শুরু
2020.07.14
ঢাকা
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ শুরু করেছে ভারত।
মঙ্গলবার কলকাতা বন্দর থেকে খাদ্যপণ্য এবং স্টিল বোঝাই একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬ জুলাই পৌঁছাবে বলে বেনারকে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের যুগ্ম সচিব জাফর আলম। তিনি বলেন, “বন্দরে মাল খালাসের পর সেগুলো সড়কপথে ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের সাত উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য সরবরাহ করলে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। পণ্যের পরিমাণ বেশি হলে বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিমাণ ট্রানশিপমেন্ট মাশুলও আয় করতে পারবে।
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষা না করেই ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
যুগ্ম সচিব জাফর আলম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের সাথে ভারতের চুক্তি হয়েছে অনেক দিন হয়ে গেলো। আজকে প্রথম ট্রায়াল হিসাবে কলকাতা বন্দর থেকে চার কন্টেইনারে করে ডাল এবং লোহাবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে। পণ্যগুলো ভারতের ত্রিপুরায় যাবে।”
তিনি বলেন, “পণ্যগুলো খালাস করতে অন্যান্য ব্যবহারকারীরা যে চার্জ দিয়ে থাকেন এই পণ্যের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। তবে আমরা এখনো বলতে পারছি না ভারতের ব্যবসায়ীর বছরে কী পরিমাণে পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিয়ে যাবেন।”
জাফর আলম বলেন, “ট্রান্সশিপমেন্ট একটি বন্দরের সম্মান বৃদ্ধি করে। তাঁদের চাহিদা মোতাবেক আমাদের বন্দরে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করব।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা সময় পর্যন্ত ভারতকে ট্রানজিট/ট্রান্সশিপমেন্ট দেওয়া একটি বিতর্কিত বিষয় ছিল। ভারতকে বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে মালামাল পরিবহনের ঘোরতর বিরোধী ছিল বিএনপি সরকার।
তবে আওয়ামী লীগ ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার পক্ষে ছিল।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের বন্দর ও ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের অন্য রাজ্যে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়। এরপর ২০১৫ সালে তা আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বেনারকে বলেন, “এর আগে মানবিক কারণে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য গেছে। কিন্তু আজকে যে জাহাজ আসছে এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট শুরু হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি বড় ঘটনা।”
বহুদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতে পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে আপত্তি ছিল বিএনপি’র। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে ইতিবাচক ছিল বলে জানান হুমায়ূন কবির।
তিনি বলেন, “আমরা ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করব। এই ট্রান্সশিপমেন্ট থেকে আমরা যেন লাভবান হতে পারি। সেদিকে আমাদের নজর থাকতে হবে।”
“অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন যে ট্রান্সশিপমেন্ট চার্জ খুব কম হয়েছে,” মন্তব্য করে হুমায়ূন কবির বলেন, “দু’দেশ আলোচনা করে এব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে যাতে একটি ভালো উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।”
এদিকে “প্রতিবেশীসহ যেকোনো দেশের সাথে কানেকটিভিটিতে (যোগাযোগ) আমাদের আপত্তি নেই,” মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “কিন্তু আমাদের কথা হলো, ট্রান্সজিট হোক অথবা ট্রান্সশিপমেন্ট হোক তা হতে হবে জাতীয় স্বার্থে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করেই এগুলো করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এটি দুঃখের বিষয় যে বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষা করছে না। নাম মাত্র মূল্যে ট্রান্সশিপমেন্ট করা হচ্ছে। জনগণের কাছে এমন ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হবে না।”
পার্সেল ট্রেন চালু
করোনাভাইরাসের কারণে স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে যে অচলাবস্থা চলছে তা নিরসনে প্রথমবারের মতো পার্সেল ট্রেন চালু করেছে ভারত।
ট্রেনটি মঙ্গলবার বেনাপোলে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পণ্য বিপণন বিভাগের উপপরিচালক কালিকান্ত ঘোষ বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে বেনাপোল-পেট্রোপোল দিয়ে পণ্য আনা নেয়া বন্ধ। এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে গত ৪ মে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের এক ভিডিও সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যবসায়ীরা পার্সেল ট্রেনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেনাপোল স্থল বন্দরে মালামাল আসবে।”
তিনি বলেন, “গত ১০ জুলাই হায়দারাবাদ থেকে শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে একটি ট্রেন বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এটি বাংলাদেশে আসা প্রথম পার্সেল ট্রেন। ১৪ জুলাই বেনাপোলে পৌঁছায়।”
“আমরা আশা রাখি দুই দেশ রাজি থাকলে এই পার্সেল ট্রেন আর বন্ধ হবে না,” মন্তব্য করে কালিকান্ত ঘোষ বলেন, “ট্রাকে পণ্য বহন করলে খরচ অনেক বেশি। ট্রাকে করে একসাথে এত বেশি পণ্য বহন করা যায় না। সময়ও তিনগুণ লাগে।”
পার্সেল ট্রেনের কারণে মাত্র চারদিনে হায়দারাবাদ থেকে বেনাপোল পণ্য আনা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি ট্রাকে করে আনা হতো তাহলে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় প্রয়োজন হতো।”