মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সেনাদের যৌথ সাইকেল অভিযান
2017.03.22
ঢাকা

মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক যৌথ অভিযানকে স্মরণীয় করে রাখতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর যৌথ এক সাইকেল অভিযান আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার সকালে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার লিচুবাগান থেকে এই সাইকেলযাত্রার উদ্বোধন করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪ কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল অমরজিৎ সিং বেদী।
আগরতলা থেকে শুরু হওয়া এই যৌথ সাইকেল অভিযান বাংলাদেশের কুমিল্লা, ঢাকা, যশোর হয়ে বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের কলকাতায় শেষ হবে। মাত্র ১৪ দিনে আরোহীরা সর্বমোট ৫৩২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবেন।
এই সাইকেল অভিযানটি হচ্ছে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে। আবার এর কয়েক দিন পরেই আগামী ৭ এপ্রিল চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ৮ এপ্রিল।
আসন্ন এ সফরে প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টিও সফরে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।
সাইকেল যাত্রা উদ্বোধনের পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এস বেদি ত্রিপুরায় স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, “এই সাইকেলযাত্রা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটাবে।”
“শুধু সাইকেল সাফারিই নয়, যৌথ সেনা প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে দুই দেশের সেনাবাহিনীর জন্য একাধিক যৌথ কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে,” জানান তিনি।
এ এস বেদি বলেন, “সীমান্তবর্তী দুই বন্ধু দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ধারা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত। সাইকেলযাত্রা এরই অংশ।”
যৌথ সাইকেলযাত্রায় অংশ নিতে ১৯ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন সাইক্লিস্টসহ ২০ সদস্যের একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আগরতলায় পৌঁছায়। দুই দেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন করে কর্মকর্তা ও সৈনিক এই সাইকেল যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
সাইকেল আরোহীরা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়ে মোট ৫৩২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আগামী ৪ এপ্রিল কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে প্রবেশ করবেন।
শুক্রবার তাঁরা ঢাকায় থেকে শনিবার মানিকগঞ্জ এবং রোববার ফরিদপুর পৌঁছে সোমবার পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন। আগামী মঙ্গলবার মাগুরা থেকে যশোর রওনা দেবে এই দল। বুধবার সেখানে থাকবেন।
আগামী বৃহস্পতিবার যশোর থেকে রওনা দিয়ে ওই দিনই বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর বা বালিগঞ্জে রাত্রিযাপন করবেন সাইকেল আরোহীরা। আগামী মঙ্গলবার তাঁদের কলকাতার ঐতিহাসিক ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এক ইমেইলে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন বেনারকে জানায়, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান করেছিল। ঐতিহাসিক সেই যৌথ অভিযানকে স্মরণীয় করে রাখতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এই যৌথ সাইকেল অভিযান আয়োজন হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা-উল করিম শাম্মী বেনারকে জানান, “যৌথ সাইকেল দলের সেনাসদস্যরা বাংলাদেশ এবং ভারতে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করবেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।”
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, যাত্রা শুরুর পর যৌথ সাইকেল অভিযাত্রী দল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক ঐতিহাসিক স্থান এবং সীমান্তের খুব কাছে ছোট্টাকোলায় ‘মৈত্রী উদ্যান’ পরিদর্শন করেছেন। এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বেইজ ক্যাম্প, এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযান পরিচালনা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকার এখনো রয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের অভিযানের ম্যুরাল অঙ্কিত রয়েছে। এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে যেখান থেকে নোয়াখালী ও ফেনীর অংশ দেখা যায়।
দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এ ধরনের আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বিরাজমান। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় এবং বিস্তৃত হবে আঁচ করা যাচ্ছে। তাই এই সাইকেল অভিযান তারই অংশ হতে পারে।”
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি