কারামুক্ত ভারতীয় সাংবাদিকের লড়াই অব্যাহত রাখার প্রত্যয়

সনি স্যাঙ্গন
2017.03.14
নয়া দিল্লি
পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত মাওবাদী নেতা প্রভাকরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সমর্থকদের সমাবেশ। অন্ধ্র-ওড়িশা সীমান্তে পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত মাওবাদী নেতা প্রভাকরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সমর্থকদের সমাবেশ। হাদারাবাদ, ভারত। ২৭ অক্টোবার ২০১৬
AFP

সাংবাদিক সন্তোষ যাদবের মতে মধ্যভারতের বামপন্থী গেরিলা অধ্যুষিত অঞ্চলে পুলিশি নিষ্ঠুরতার বিপক্ষে লেখার জন্যই তাঁকে বন্দী ও নির্যাতন করা হয়েছিল।

প্রায় দেড় বছর কারাবাসের পর গত সপ্তায় জগদলপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্রিশগড়ের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সন্তোষ যাদব মুক্তি পান। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে মাওবাদী সমর্থক অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ও বনাঞ্চলে ঘাঁটি করে ১৯৬০ সাল থেকে মাওবাদীরা ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে আসছে। মাওবাদীরা নকশাল হিসেবেও পরিচিত।

চীন বিপ্লবের নেতা মাও সেতুং এর অনুসারী এই বামপন্থীদের দাবি, তারা বনাঞ্চল থেকে সরকার কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া দরিদ্র এবং ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

২০১৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছত্রিশগড়ের অন্তত অর্ধ ডজন সাংবাদিককে হয় গ্রেপ্তার, না হয় এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সন্তোষ তাঁদের মধ্যে একজন।

সন্তোষের মতে, ছত্রিশগড় সাংবাদিকদের জন্য একটা উভয় সঙ্কটের স্থান।

“সেখানে মাওবাদীরা সাংবাদিকদের ‘সরকার সমর্থক’ ভেবে শত্রু মনে করে। আবার যারা মাওবাদী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষভাবে লেখে, যা অনেক ক্ষেত্রেই হয় পুলিশি নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা, তাঁদেরকে পুলিশও প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে,” বেনারেক বলেন সন্তোষ।

সন্তোষের আইনজীবী অরবিন্দ চৌধুরীর মতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছিল।

“পুলিশ বলছে যে তারা সন্তোষকে একটি অভিযানের সময় মাওবাদীদের সাথে দেখেছে। একজন কর্মকর্তা বলেছেন অন্ধকার রাতে ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে তিনি সন্তোষকে দেখে চিনতে পারেন। অথচ সেই কর্মকর্তাই কিন্তু তাঁকে অন্যান্যদের মধ্যে দেখে চিহ্নিত করতে পারেননি,” বেনারকে বলেন এই আইনজীবী।

তবে বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে বলে ছত্রিশগড়ের দুজন উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার কেউ সন্তোষ যাদবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দেড় বছর পর মুক্তি পাওয়া সাংবাদিক সন্তোষ যাদব। মার্চ ১২, ২০১৭।
দেড় বছর পর মুক্তি পাওয়া সাংবাদিক সন্তোষ যাদব। মার্চ ১২, ২০১৭।
[সন্তোষ যাদবের সৌজন্যে]
সাক্ষাৎকার

মুক্তির পর সন্তোষ যাদব বেনারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কথোপকথনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অংশ:

বেনার নিউজ: আপনাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল?

সন্তোষ যাদব: আমি সংবাদ পেয়েছিলাম যে, পুলিশ কয়েকজন আদিবাসীকে পাশের একটি গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে গেছে। তখন আমি তাঁদের পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য সেখানে যাই। পরে পরিবার সদস্যদের অনুরোধে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে আমি তাঁদের সাথে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে যাই। সেখানে পুলিশ দাবি করে যে, গ্রেপ্তারকৃতরা মাওবাদী এবং তাঁরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা ছিল নিরীহ গ্রামবাসী। আমি পুলিশকে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করায় পুলিশ আমাকে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।

বেনার: আপনি কখন আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো জানতে পারেন?

সন্তোষ: অনেক পরে। আটক করার কয়েকদিন পর আমাকে জানানো হয় যে, মাওবাদীদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আমাকে আটক করা হয়েছে। আমি নাকি অভিযানের সময় মাওবাদীদের সাথে ছিলাম। সত্য হলো সেদিন আমি ওই এলাকাতেই ছিলাম না।

বেনার: গ্রেপ্তারের পর কী ঘটেছিল?

সন্তোষ: আমাকে জগদলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছিল। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই অমানবিকভাবে মারধর ও নির্যাতন করা হতো। সেখানে জীবন যাপনের ব্যবস্থা ছিল দুর্বিসহ। অখাদ্য খাবার খেয়ে আমাকে সেখানে থাকতে হতো। যতদিন পারা যায় সহ্য করে আমি প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু জেলখানার নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মানে, বাড়তি আরো কিছু নির্যাতন ডেকে আনা ছাড়া আর কিছু না।

বেনার: আপনার গ্রেপ্তারে আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

সন্তোষ: আমার তিন মেয়ে। আট বছরের দিব্য, চার বছরের ইসমেয়া এবং আমার গ্রেপ্তারের সময় ছোটটির বয়স ছিল মাত্র এক মাস। আমার স্ত্রী পুনম মাতৃসেবা ও পরিচর্যার কাজ করে। আমার বাবা একজন পিয়ন। আমার ছোট মেয়েটার নাম রাখার আগেই আমি গ্রেপ্তার হয়ে যাই। আমার স্ত্রী আমি মুক্তি পাবার আগ পর্যন্ত মেয়েটির নাম রাখতে চায়নি। আমরা এখনো তার নাম ঠিক করিনি। আমার পরিবার সব সময় আমার পেছনে একটি বিশাল সমর্থন হিসেবে ছিল, তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচুর কাজ করেছে।

বেনার: আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

সন্তোষ: আমি ছত্রিশগড় থেকেই সংবাদ প্রচার অব্যাহত রাখব। এই ঘটনা আমাকে আমার কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। আমি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখব। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো যেমন বন্ধ হওয়া দরকার, তেমনি কাউকে না কাউকে তো ভারতের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ এবং আদিবাসী মানুষদের মুখপাত্র হিসাবে কথা বলতেই হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।