আন্দোলনের মুখে পাটকল শ্রমিকেরা পেল হাজার কোটি টাকা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.04.11
160411-BD-jute-620.jpg খুলনার পাটকল শ্রমিকেরা রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে রেল চলাচল অবরোধ করে। ১১ এপ্রিল ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

লোকসানের মুখে পড়া পাটকলগুলোর শ্রমিক–কর্মচারীদের এক হাজার কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আন্দোলনের মুখে গতকাল সোমবার সরকার এই ঘোষণা দেয়।

মঙ্গলবার আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঢাকায় এসে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে।ওই আলোচনার পর লাগাতর কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসতে পারে।

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খুলনা অঞ্চলের সাতটি পাটকল শ্রমিকেরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করছেন। এই আন্দোলনে দেশের অন্যান্য এলাকার পাটকল শ্রমিকদের সমর্থন রয়েছে।

শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরি প​রিশোধ, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়, পে-কমিশনের ন্যায় অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে শ্রমিকদের জন্য মজুরি কমিশন বোর্ড গঠন, গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ সব পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।এই প্রেক্ষাপটে সরকার তাদের দাবি মেটাতে এই বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে।

“প্রধানমন্ত্রী সব বকেয়া পরিশোধ ছাড়াও পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে স্থাপিত পাটকলগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে বলেছেন। ইতিমধ্যে পাটকলগুলোর উৎ​পাদনক্ষমতা কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে,” বেনারকে জানান পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

তিনি বলেন, একদিকে সরকারি পাটকলে শ্রমিক বেশি ও মজুরিও বেশি; এ ছাড়া পাটকলগুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতির যেসব অভিযোগ ছিল, সেগুলো ব​ন্ধ করা হয়েছে।

এদিকে বিজেএমসি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। গত তিন বছর ধরে এসব পাটকলে অচলাবস্থা চলছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিং আয়োজন করে মির্জা আজম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পয়লা বৈশাখের আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির একটা অংশ দেওয়া হবে। বাকি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় পাওয়া গেলে গ্র্যাচুইটি ও ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) বাবদ পরিশোধ করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাটকলগুলো লাভ করতে না পারলেও আয়-ব্যয় সমান হবে।

বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ২৭টি পাটকলে মোট শ্রমিক আছেন ৭০ হাজার। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ৩২ হাজার আর বাকিরা বদলি শ্রমিক।

সংবাদ বিফ্রিংয়ের সময় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ ​উদ্দিন প্রামাণিক এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব এম কাদের সরকার উপস্থি​ত ছিলেন।

এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পাটকলশ্রমিক ও কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা, ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ৩০০ কোটি, এবং পাট কেনার জন্য ২০০ কোটি দরকার বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় হিসেব দেয়।

এ ছাড়া শ্রমিকদের সপ্তাহের মজুরি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়েছে। এর বাইরে পাটকলগুলো সংস্কার করতেও টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে বলেন।

“আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জেনেছি। আলোচনার জন্য আমাদের পাট মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়েছে। ওই আলোচনার পর কর্মসূচীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে,” টেলিফোনে বেনারকে জানান বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব জাকির হোসেন।

গতকালও খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিক–কর্মচারীরা। খুলনা-যশোর রেলপথেও অবরোধ করে তারা। এতে যাত্রীদের মারাত্মক দুর্ভোগ হয়।

“শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ট্রেন চলাচল না করায় যাত্রীদের দুর্ভোগ হচ্ছে,” বেনারকে জানান খুলনার স্টেশনমাস্টার কাজী আমিরুল ইসলাম।

গত কয়েকদিনে মানুষের দুর্ভোগের কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব জাকির হোসেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।