ঘোষণা অনুযায়ী আদালত বর্জন করলেন খালেদা জিয়া

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.09.12
ঢাকা
180912_Khaleda_zia_1000.JPG খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় বিএনপির প্রতীকী অনশন কর্মসূচি। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
বেনারনিউজ

কারাগারের অভ্যন্তরে আরেক দুর্নীতি মামলার বিচার শুরুর দিনই খালেদা জিয়া আদালতকে বলেছিলেন যে, তিনি ভবিষ্যতে ওই আদালতে আর হাজিরা দেবেন না। গত ৫ সেপ্টেম্বরের সেই ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার জিয়া চ্যারিটেবল মামলার নির্ধারিত দিনের শুনানিতে হাজির হননি তিনি।

তবে তাঁর আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলবে কি না।

এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া কোনো জবাব দিতে পারেননি। তবে তিনি লিখিতভাবে কারাগারের অভ্যন্তরে আদালত বসানোর বিরোধিতা করে উন্মুক্ত আদালতে তাঁর মক্কেলের বিচার পরিচালনার কথা জানান।

তিনি আদালতের কাছে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের সময় বৃদ্ধির আবেদন জানান। বিচারক আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীর বক্তব্য শোনার জন্য দিন ধার্য করেছেন।

আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বেনারকে বলেন, তিনি বুধবার কারাগারের অভ্যন্তরে স্থাপিত আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

“আমি বলেছি, কারাগারের অভ্যন্তরে কোনো আদালত হতে পারে না। এটি সংবিধান বিরোধী,” জানান সানাউল্লাহ মিয়া।

ওই আইনজীবী বলেন, ভবিষ্যতে ওই আদালতে আসবেন কি না সে ব্যাপারে তাঁর মতামত জানতে বৃহস্পতিবার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাথে তিনি দেখা করার আবেদন জানাবেন।

“আমরা দেখা করে উনাকে বোঝানোর চেষ্টা করব,” সানাউল্লাহ মিয়া বলেন।

অপরপক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বেনারকে বলেন, “তাঁদের মতে আদালত অবৈধ। তাহলে তাঁরা আবার কেন ওই আদালতেই খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করছেন?”

তিনি বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

কাজল বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে না এসে বিচার ব্যবস্থার প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছেন। কোনো সাধারণ আসামি যদি আদালতে উপস্থিত না হওয়ার ঘোষণা দিত তাহলে কী করা হতো? জোর করে আদালতে নেওয়া হতো। তবে তাঁকে তো আর তা করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “দেখা যাক আগামীকাল আদালত কী সিদ্ধান্ত দেন।”

বিএনপির অনশন কর্মসূচি

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বুধবার সকালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ সারা দেশে জেলা সদরে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

দলের সিনিয়র নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেন।

সকাল দশটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচিতে কয়েক’শ নেতা-কর্মী অংশ নেয়। তারা সরকার বিরোধী স্লোগান দেয়।

মওদুদ আহমদ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ হলো রাজপথ। শুধু অনশন নয়। আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। হাতে সময় বেশি নাই। আপনারা প্রস্তুতি নেন।”

তাঁর বক্তব্যের পর নেতা–কর্মীরা চিৎকার করে সমর্থন জানান।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ পানি পান করিয়ে মোশাররফ হোসেনের অনশন ভঙ্গ করান।

অনশন শেষে ফেরার পথে ১০৭ জন নেতা-কর্মী আটক হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার রাত থেকে সারা দেশে আরও ৪৪ জন আটক হয়েছে। এ ছাড়া সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি বাধার অভিযোগ করেছে বিএনপি।

অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশ ৪০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ফখরুল নিউইয়র্কে

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচনের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে নিউইয়র্ক গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আওয়াল তাঁর সাথে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জেনারেল মাহবুবুর রহমান বুধবার বেনারকে বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁকে সময় দিয়েছেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, মহাসচিব মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে তিনি নিউইয়র্ক গেছেন। তিনি অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “জাতিসংঘ মহাসচিব অথবা অন্য কারও কাছে নালিশ করে কোনো লাভ নেই। সবাই জয়ীদের পক্ষে থাকতে চায়। পরাজিতের পক্ষে সবার সহানুভূতি থাকে, করুণা থাকে। কিন্তু সমর্থন দেয় না।”

খালিদ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে হলে জনগণের ভোট নিয়ে আসতে হবে। সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগেরই আছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।