খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে
2018.09.20
ঢাকা
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তৃতীয় শুনানিতে হাজির হননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, বিএনপি প্রধান আদালতে আসতে ‘ইচ্ছুক নন’।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলবে’ বলে বৃহস্পতিবার মতামত দিয়েছেন পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়া পলাতক নন। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার করা যাবে না।”
আদালতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলা পরিচালনা প্রসঙ্গে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, “ম্যাডাম অনুপস্থিত থাকলে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে। সাজা দিয়ে দেবে। তিনি ন্যায় বিচার পাবেন না।”
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বেনারকে বলেন, “আজকেও খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি। আদালত দুপক্ষের যুক্তি তর্ক শুনেছেন এবং বলেছেন আসামি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলার কাজ চলবে।”
তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। আইন অনুযায়ী তিনি সকল আইনি সুবিধা পাবেন।”
কাজল বলেন, “আদালত আসামির উপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছেন যে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হতে অনিচ্ছুক। পরে আদালত বলেছেন তিনি ইচ্ছা করেই আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না।”
খালেদা জিয়া অনুপস্থিত থাকলেও পুরোনো কারাগারেই আদালতের কার্যক্রম চলবে জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বেনারকে বলেন, “আজকে আমরা আদালতে বলেছি যে বেগম খালেদা জিয়া কারাগার কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আছেন। তিনি তো পলাতক নন। উনি অসুস্থ। তাহলে কেন তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলবে?”
“তবে আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করেননি। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন। আমি মনে করি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কার যাবে না,” বলেন তিনি।
সানাউল্লাহ জানান, আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়ার জামিন বহাল থাকবে। আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানি হবে।
তিনি বলেন, আদালত কারা কর্তৃপক্ষকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে।
জিয়া অরফানেজ দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
তাঁর বিরুদ্ধে চলা আরেক মামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়া ছিলেন গরহাজির। তাঁর আইনজীবীদের মতে, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাই তিনি বকশি বাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে যেতে পারেননি।
খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পুরোনো কারাগার ভবনে বিশেষ আদালত স্থাপন করে সরকার।
শুনানির প্রথম দিন ৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হয়ে জানান, ‘যত দিন ইচ্ছা সাজা দিন, আর আদালতে আসতে পারব না’। খালেদা জিয়া এও বলেন, এই আদালত থেকে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না।
খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, তিনি অসুস্থ। তাঁর সুচিকিৎসা দরকার।
বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “মারাত্মকভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে হত্যার চেষ্টা করছে সরকার।”
তিনি খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী ইউনাইটেড অথবা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি করেন।
জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ আদালতে খালেদা জিয়াসহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আদালত।
অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
মুন্না বর্তমানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক পদে রয়েছেন। সচিব হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
কুমিল্লার মামলায় পরবর্তী শুনানি ৩০ সেপ্টেম্বর
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে আটজন হত্যার ঘটনায় জামিনের শুনানি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির নতুন তারিখ দেন কুমিল্লার ৫ নম্বর (চৌদ্দগ্রাম) আমলি আদালতের বিচারিক হাকিম গোলাম মাহবুব খান।
এ বিষয়ে বেগম খালেদার আইনজীবী মো. কাইমুল হক বেনারকে জানান, “চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সময় চাওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।”
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রল বোমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে আটজন যাত্রী নিহত ও ২৭ জন আহত হন।
এ ঘটনার পরদিন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে জামায়াতের সাবেক সাংসদ সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ ৫৬ জন বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর তিন ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিলেও তাঁরা খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি। পরে ২০১৫ সালের ২ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লায় বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী মো. কাইমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “বাসে আগুনে পুড়িয়ে আটজন মারা যাওয়ার এই মামলায় খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে তথা মামলার প্রাথমিক বিবরণীতে নেই। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে খালেদা জিয়ার নাম বলেননি। তারপরেও তাঁকে এই মামলায় রাজনৈতিকভাবে জড়ানো হয়।”
প্রতিবেদেনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি।