আটক শেষ দলটিকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠালো ইন্দোনেশিয়া

নূরদিন হাসান
2019.02.27
বানদা আচে, ইন্দোনেশিয়া
1902027_ID_Bangladeshi_1000.jpg ইন্দোনেশিয়ার মেদান শহরের একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আটক বাংলাদেশিদের কয়েকজন। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
[এএফপি]

ইন্দোনেশিয়ায় আটক প্রায় তিনশো বাংলাদেশির শেষ দলটিকেও বুধবার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এই বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা প্রদেশের মেদান শহরে জড়ো হবার পর মাসের শুরুর দিকে পুলিশের হাতে আটক হন।

আটক মোট ২৮৮ জন বাংলাদেশির শেষ দলে ৩৪ জনকে বুধবার মেদান শহরের কুয়ালানামু বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর সুমাত্রার অভিবাসন বিভাগের প্রধান আইকন সিরেগার।

“তাঁদের সবারই পাসপোর্ট ও ফিরতি টিকিট রয়েছে। ফলে তাঁদের ফেরত পাঠানোটা বেশ সহজ হয়েছে,” বেনারকে বলেন আইকন সিরেগার।

এদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।

সংস্থাটির মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বেনারকে জানান, গত কয়েক দিনে প্রায় দুইশো বাংলাদেশি ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফিরেছে। তাদের অনেকেই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছে।

আরো কিছু বাংলাদেশি সেখানে আটক রয়েছে। তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হবে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। তবে ঠিক কত জনের ফেরা বাকি তা বলতে পারেননি শরিফুল হাসান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশিদের জন্য এখন ইন্দোনেশিয়ায় অন অ্যারাইভাল ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে এয়ারপোর্টের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তারা দেশটিতে চলে যায়।

ফেব্রুয়ারির ৫ ও ৬ তারিখ ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ ও অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা মেদান শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই বাংলাদেশিদের আটক করেন। এর মধ্যে ২০০ জনকে গাদাগাদি করা অবস্থায় একটি বন্ধ দোকানঘরের ভেতর পাওয়া যায়।

কর্মকর্তারা জানান, ওই বাংলাদেশিরা অবতরণ ভিসার সুবিধা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়া।

বাংলাদেশিদের প্রথম দলটিকে চলতি মাসের ১১ তারিখ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানান আইকন। ওই সময় ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এই প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বেনারের পক্ষ থেকে ইমেইল পাঠালেও তার কোনো উত্তর আসেনি।

আটক বাংলাদেশিসহ এই ঘটনায় কারো বিরুদ্ধেই কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানান উত্তর সুমাত্রা পুলিশের মুখপাত্র তাতনা দিরসান আতমাজা। তবে এই ২৮৮ জন বাংলাদেশি পরবর্তী ছয় মাস ইন্দোনেশিয়া প্রবেশে করতে পারবেন না বলে জানান আইকন।

আইকন জানান, বাংলাদেশিরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেবার জন্য মেদানকে বেছে নেবার মূল কারণ হলো শহরটি মালয়েশিয়ার খুব কাছে।

তিনি বলেন, “লক্ষ্মণ দেখে মনে হয় তারা কাজের জন্য মালয়েশিয়া যাবার উদ্দেশ্যে এখানে যাত্রা বিরতি করছিলেন। এর সাথে মালয়েশিয়ার একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলে আমাদের সন্দেহ।”

“মেদানে অবশ্যই তাদের সহযোগী রয়েছে, তবে সিন্ডিকেটটি মালয়েশিয়,” যোগ করেন আইকন।

এদিকে মেদানের লিগ্যাল এইড ইন্সটিটিউটের পরিচালক ইসমাইল লুবিস বেনারকে জানান, বিদেশি এবং ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকরা প্রায়ই মালয়েশিয়া পাড়ি দেবার জন্য মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করেন।

“তারা সাধারণত মাঝরাতে নৌকায় চড়ে। নৌকায় করে তারা গিয়ে ক্লাং বন্দর অথবা মালাক্কায় পৌঁছায়। সব কিছু চোখের আড়ালে রাখতে তারা সেখানেও রাতে চলাচল করে,” বলেন ইসমাইল।

মেদানে বাংলাদেশিদের জড়ো করার সাথে স্থানীয় দালালরাও যুক্ত বলে মনে করেন ইসমাইল।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।