‘অনিয়মিত’ শ্রমিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি আরব
2017.05.01
ঢাকা

সৌদি আরবে চলমান ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিরোধী অভিযানে বারো হাজারের বেশি ‘অনিয়মিত’ বাংলাদেশি শ্রমিক ফিরে আসতে পারেন। এতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন প্রবণতা কমার সম্ভাবনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর ওপর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, “দেশের অনেক পরিবার শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ দিয়ে জীবন ধারণ করেন। অনেক শ্রমিক ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অথবা কর্মস্থল ত্যাগ করলে অনিয়মিত হয়ে যান।”
তিনি বলেন, “অনিয়মিত এসব শ্রমিক নিয়মিত পরিবারের কাছে টাকা পাঠান। এরা দেশে ফিরলে ওই পরিবারগুলো বিপদে পড়বে।”
গত ২০ মার্চ সৌদি আরব সরকার সেদেশে অবস্থানরত ‘অবৈধ’ বিদেশি নাগরিকদের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ‘জেনারেল অ্যামনেষ্টি’ নিয়ে নিজ দেশে ফেরার সুযোগ ঘোষণা করেছে। অন্যথায় জেল-জরিমানার শিকার হতে হবে বলে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত লেবার এটাশে আমিনুল ইসলাম গতকাল টেলিফোনে বেনার নিউজকে বলেন, “সৌদি সরকার সেদেশে অবস্থানরত অবৈধ কর্মীদের সংখ্যা শূন্যের কোটায় আনতে চায়।”
তবে বিদেশে অবস্থানকারী নিয়মিত শ্রমিকদের পাশাপাশি অনিয়মিত শ্রমিকরাও বড়ো রকমের অবদান রাখছেন বলে মনে করেন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ওয়ারবি ফাউন্ডেশনের প্রধান সৈয়দ সাইফুল হক।
তিনি বেনারকে বলেন, “বিশ্বে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। নিয়মিত শ্রমিকদের পাশাপাশি অনিয়মিত এই সকল বাংলাদেশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।”
“সৌদি আরবের মতো মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে আমাদের জন্য তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সরকার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে অনিয়মিতদের নিয়মিত করতে পারলে হুন্ডি ও অনিয়মিতভাবে অর্থ লেনদেন কমে যাবে,” বলেন সাইফুল হক।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, ‘অনিয়মিত’ এই বাংলাদেশি শ্রমিকেরা দেশে ফিরে আসলে তা দেশের রেমিটেন্সে সার্বিক অর্থে প্রভাব ফেলবে না।
“আমাদের শ্রমিকদের বের করে দিলে কিছু পরিবার অবশ্যই আর্থিক সংকটে পড়বে। তবে সার্বিকভাবে রেমিটেন্সের ওপর এর প্রভাব পড়বে না। কারণ, অনিয়মিত শ্রমিকেরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র গবেষক নাজনীন আহমেদ।
দেশে কী পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয় তার হিসাব নেই জানিয়ে নাজনীন বলেন, সৌদি আরবের এই অভিযানের ফলে দেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমে আসবে। হুন্ডি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় হুমকি বলেও মত দেন তিনি।
তবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা কমিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর বিষয়টি জনপ্রিয় করতে হলে টাকার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাড়াতে হবে বলেও মনে করেন নাজনীন।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে টাকা লেনদেন জনপ্রিয় করতে আইনীসহ সব চেষ্টাই করছে বলে বেনারকে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ দেবনাথ।
উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যাংক অথবা অর্থ প্রেরণকারী সংস্থার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে কম টাকা পাওয়া যায়। যেমন, ব্যাংক যেখানে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৭৯ থেকে ৮০ টাকা দেয়, সেখানে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে ৮৩ থেকে ৮৪ টাকা পাওয়া যায়।
“ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করলে অর্থ প্রেরণকারীরা বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বেশি টাকা পাবেন। এতে হুন্ডি কমে আসবে,” বলেন নাজনীন আহমেদ।
ফেরত আসতে পারেন ১২ হাজারের বেশি
জানা যায়, এ পর্যন্ত আট হাজার বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আরো অনেকে এই সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরবেন বলে ধারণা করা যায়।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার সূত্রে জানান, এই অভিযানে অন্তত ১২ হাজারেরও বেশি অনিয়মিত বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরে আসবেন। তবে সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে
সরকারি হিসাব অনুসারে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে বিশ্বে প্রায় ৭৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে সৌদি আরবেই রয়েছেন প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক। এখন পর্যন্ত ওই দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে। তবে বিশ্বব্যাংক গত ২১ এপ্রিল এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত দুই বছর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে।
সরকারি হিসাবে, ২০১৬ সালে প্রবাসীরা দেশে ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। ২০১৫ সালে এই পরিমাণ ছিলো ১৫.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।